নতুন বছরের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী চাষিদের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। বলা হচ্ছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে চাষি নিশ্চিত আয়ের মুখ দেখবেন। লোকসভা ভোটে তার সুফল পাওয়ার বিলক্ষণ আশা রয়েছে শাসক দলের। কিন্তু এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া শর্ত পূরণ করতে গিয়েই চাষির ঘাম ছুটছে।
রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, এক একর জমি চাষের জন্য বছরে চাষিদের দেওয়া হবে ৫ হাজার টাকা। জমির পরিমাণ অনুযায়ী বছরে সর্বনিম্ন দু’হাজার টাকা মিলবে। ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কোনও কৃষক মারা গেলে এককালীন দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। গত ১ জানুয়ারি থেকে এই প্রকল্প কার্যকর হয়েছে।
কিন্তু নথিপত্র দেখাতে গিয়েই বিপদে পড়ছেন চাষিরা। জেলার এক সহকারী কৃষি অধিকর্তা জানাচ্ছেন, প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত হতে গেলে চাষিকে প্রথমেই জমির পরচা দেখাতে হবে। তার সঙ্গে ভোটার কার্ড ও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টও থাকতে হবে। পরের দুটো নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কারণ, তা সব চাষিরই রয়েছে। কিন্তু জেলার সিংহভাগ চাষিরই কেবল জমির দলিল রয়েছে। পরচা নেই।
কেউ জমি কিনলে প্রথমেই মেলে দলিল। রেজিস্ট্রির পরে মিউটেশন ফি কেটে নিয়ে তা পাঠানো হয় ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দফতরে। সেখানেই হয় মিউটেশন। তা না হলে পরচা মেলে না। জমি তাঁর নামে নথিভুক্ত হলে তবেই চাষি তার পরচা হাতে পাবেন।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, যান্ত্রিক গোলযোগ, চাষিদের অনীহা-সহ নানা কারণে নতুন নিয়মেও মিউটেশন আটকে যাচ্ছে। তা ছাড়া বহু বছর আগে বহু চাষি জমির নথিভুক্ত করার জন্য ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু আজও তাঁরা কাগজপত্র হাতে পাননি। আর গ্রামের গরিব চাষিরা সাধারণত নিজেরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে যান না। তাঁরা দলিল ও খাজনার নথি নিয়ে মুহুরির দ্বারস্থ হন। দিনের পর দিন মুহুরিদের কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও নথিভুক্তির কাগজ হাতে পান না।
হরিণঘাটার নিমতলার মিজানুর রহমানের যেমন প্রায় আড়াই বিঘে জমি রয়েছে। তিনি মাস চারেক আগে এলাকার এক জনকে জমি নথিভুক্ত করার জন্য কাগজপত্র দেন। কিন্তু এখনও তা পাননি।
এখন কৃষক বন্ধু প্রকল্পের জন্য মৌজাওয়াড়ি আবেদনপত্র সংগ্রহ চলছে। কিন্তু পরচার অভাবে বহু চাষিই আবেদন করতে পারছেন না বলে কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন। এক সহকারী কৃষি অধিকর্তার দাবি, দিন কয়েক তিনি একটি মৌজায় গিয়েছিলেন। সেখানে অন্তত হাজারখানেক চাষি রয়েছেন। কিন্তু কৃষক বন্ধু প্রকল্পে আবেদন করতে পেরেছেন মাত্র ৮৪ জন। কারণ, বেশির ভাগ চাষিরই পরচা নেই। অধিকাংশ ভাগচাষিই আবার জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তির নথিপত্র দেখাতে পারেননি। ফলে এই প্রকল্পের সুবিধা তাঁরাও পাবেন না। মৃত কৃষকের উত্তরাধিকারীরাও দু’লাখ টাকা পাবেন না, যদি না সেই চাষির জমির
পরচা থাকে।
হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের শঙ্কর দেবনাথ অবশ্য বলেন, ‘‘এই প্রকল্প তো চলতে থাকবে। ভূমি দফতরের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। দ্রুত পরচা দেওয়া হবে চাষিদের। তার পর চাষিরা আবেদন করবেন। তা গ্রাহ্য হলে জুন ও নভেম্বর এই দুই দফায় টাকা পাবেন তাঁরা।’’
লোকসভা নির্বাচনের আগে পরচা দিয়ে চাষিদের মন ভেজাতে কি সত্যিই পারবে শাসক দল? বড় প্রশ্ন সেটাই।