পুজো মরসুমে শেষ হচ্ছে ‘হুইট হলিডে’

গত কয়েক বছর থেকে গমে ছত্রাক ঘটিত ঝলসা রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছিল। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে দু’বছর গম চাষ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল রাজ্য ও কেন্দ্রের কৃষি দফতর।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০৮
Share:

মুর্শিদাবাদে গম চাষ।

গত পুজোয় ছিল স্পষ্ট ‘না’। এ পুজোয় আমূল বদলে যাচ্ছে সেই আর্জি। মণ্ডপের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনে গম বোনার ছাড়পত্র দিয়ে আবেদন জানাচ্ছে কৃষি দফতর।

Advertisement

গত কয়েক বছর থেকে গমে ছত্রাক ঘটিত ঝলসা রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছিল। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে দু’বছর গম চাষ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল রাজ্য ও কেন্দ্রের কৃষি দফতর। সেই মতো গত দু’বছর নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে গম চাষ বন্ধ (হুইট-হলিডে) ছিল।

এ ছাড়াও রাজ্যের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গম চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আগে থেকে বলা হয়েছিল, দু’বছর গম চাষ বন্ধ থাকবে। এ বছরে নতুন করে গম চাষ বন্ধ করার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোনও নির্দেশিকাও আসেনি। তাই এ বছর গম চাষ হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা কৃষি দফতর।

Advertisement

ইতিমধ্যে কৃষি দফতর বীজের সমস্যার কথা হতে পারে আন্দাজ করেই রাজ্যের কাছে পর্যাপ্ত উন্নত মানের গমের বীজ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। নদিয়া জেলাও কৃষি দফতরের রাজ্যের কর্তাদের সঙ্গে মৌখিক ভাবে একপ্রস্ত আলোচনা সেরে রেখেছে।

রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেন্দ্র থেকে দু’বছর গম চাষ বন্ধ রাখার কথা বলেছিল। দু’বছর তা বন্ধও রাখা হয়েছিল। নতুন করে গম চাষ বন্ধ করার নির্দেশিকা আসেনি। ফলে গম চাষ এ বারে হবে।’’

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় গম চাষে ঝলসা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। যার ফলে সীমান্ত লাগোয়া এলাকার চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন রাজ্য ও কেন্দ্রের কৃষি আধিকারিকেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় রাজ্য ও কেন্দ্রের কৃষি আধিকারিক ও কৃষি বিজ্ঞানীরা আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানেই ঠিক হয়েছিল— ঝলসা রোগ রুখতে নদিয়া-মুর্শিদাবাদে গম চাষ বন্ধ করার বিষয়টি।

এ ছাড়া রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গম চাষ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরে গত দু’টি মরসুমে কৃষি দফতর সচেতনতায় নামে। গম বোনা বন্ধ রাখতে ইমাম-মোয়াজ্জিনদের কাজে লাগানো হয়। পুজো মণ্ডপেও প্রচার করা হয়েছিল।

মুর্শিদাবাদের কোথাও কোথাও কৃষকেরা কৃষি দফতর ও প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ অমান্য করে গম বুনেছিলেন। তা ভাঙতে গিয়ে ডোমকলের কিছু এলাকায় বাধার মুখে পড়তে হয় প্রশাসনকে। তবে কৃষি দফতরের দাবি, শেষ পর্যন্ত হলেও প্রশাসন সফল হয়েছিল। বলা হয়েছিল, দু’বছর গম চাষের পরিবর্তে ডালশস্য ও তৈলবীজ চাষ করতে। কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে অনেকেই সেই চাষ করেছিলেন।

গমের মতো খাদ্যশস্যের চাষ দু’বছর ধরে বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছিলেন কৃষকেরা। অনেককে আটা বা গম কিনে খেতে হয়েছে। এ বারে গম চাষ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে কৃষকদের। কারণ দু’বছর গম চাষ না হওয়ায় কারও ঘরে গমের বীজ নেই। কৃষকেরা জানাচ্ছেন, এ বারে গম বীজ কেনা ছাড়া উপায় নেই। সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নদিয়া-মুর্শিদাবাদে গম বোনা হয়। সেই জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে।

মুর্শিদাবাদের উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপসকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘গম চাষ বন্ধ করার বিষয়ে এ বারে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। তাই গম চাষে হবে ধরে নিয়ে গম চাষের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি।’’

কেমন প্রস্তুতি? তাপসবাবুর দাবি, ‘‘জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। তাই উন্নত মানের গমের বীজ দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়া জেলার বীজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বারে উন্নতমানের এবং ঝলসা রোগ আটকানোর ক্ষমতা রয়েছে এমন বীজ আনার অনুরোধ করেছি।’’

নদিয়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এ বারে গম চাষ হবে ধরে নিয়েই এগোচ্ছি। ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে মৌখিক ভাবে এ বিষয়ে আলোচনাও সেরে রেখেছি।’’

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, গত বার যেমন পুজোর মণ্ডপে গম চাষ না করার আর্জি জানানো হয়েছিল। এ বারেও প্রচারের জন্য বেছে নেওয়া হবে পুজো মণ্ডপকেও। শুধু বদলে যাবে আর্জিটা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন