আমে পোকা ঠেকাতে ফাঁদ পাতছে চাষিরা

কীটনাশক নয়, মাছি ও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ‘ফেরোমোন ফাঁদ’-এর ব্যবহার বাড়াতে প্রচারে নামল কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকের চাষিদের মধ্যে এ নিয়ে যথেষ্ট সাড়াও পড়েছে।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
Share:

আম গাছে টাঙানো হচ্ছে ফাঁদ। — নিজস্ব চিত্র

কীটনাশক নয়, মাছি ও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ‘ফেরোমোন ফাঁদ’-এর ব্যবহার বাড়াতে প্রচারে নামল কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকের চাষিদের মধ্যে এ নিয়ে যথেষ্ট সাড়াও পড়েছে।

Advertisement

জেলার কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা তাপস কুণ্ডু বলছেন, “কীটনাশকের বদলে আম, লিচু, পেয়ারার পাশাপাশি ধান-সহ সমস্ত ফসল ও সব্জিতে সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করলে কীটনাশকজনিত দূষণ যেমন এড়ানো যাবে, তেমনই শুরু থেকে পোকার আক্রমণ ঠেকানো যাবে।”

উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদা পোকার আক্রমণের জন্য ব্যাপক ভাবে মার খায় আম ও পেয়ারার চাষ। এই মুহূর্তে আমগাছে মুকুলে ধরেছে। ফাঁদ পাতার উপযুক্ত সময় এখনই। তবে শুধু আম বা পেয়ারা নয়, কুমড়ো, উচ্ছে, শসা, ঝিঙের মতো সব্জিতেও ভাল ফল দেবে এই ফাঁদ। ধানের ক্ষেত্রেও এই ফাঁদ ব্যবহার করা যাবে।

Advertisement

উদ্যান পালন দফতরের বিশেষজ্ঞদের মতে, আমের মরসুম মাছিদের প্রজননেরও উপযুক্ত সময়। এই সময় স্ত্রী মাছিরা আমগুটির উপর অসংখ্য ডিম পাড়ে। সেই ডিম ফুটে বের হওয়া মাছি আমের শাস খেয়ে বড় হয়। সে কারণে আমের মধ্যে এক ধরনের সাদা পোকার জন্ম হয়। ‘সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ’-এ মূলত স্ত্রী মাছিকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে আটকে রাখা হয়। মাছি আর আমের উপর ডিম পাড়ার সুযোগ পায় না। ফলে পোকার উৎপাত নির্মূল করা সম্ভব হবে।

উদ্যান পালন দফতরের বিশেষজ্ঞ শুভদীপ নাথ জানান, এক বিঘে জমিতে ১৪টির মতো আমগাছ থাকে। সেখানে সাতটি ফাঁদ পাতলে সাদা পোকার উপদ্রব প্রায় ৯০ শতাংশ কমানো যাবে। ফলে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না।

খোলা বাজারে একটি ফাঁদের দাম ১০০ টাকা মতো। সে ক্ষেত্রে ৭০০ টাকা খরচ করলে বাগান মালিক যেমন প্রায় ২০০০ টাকার কীটনাশকের খরচ বাঁচাতে পারবেন, তেমনি বিঘে প্রতি প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার আম পচে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। শুভদীপবাবু জানান, জঙ্গিপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় চাষিদের হাতেকলমে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, ‘‘একটি ফাঁদ কয়েক বছর ধরে একাধিক বার ব্যবহার করা যাবে। শুধু স্ত্রী মাছিকে আকৃষ্ট করার জন্য যে বিশেষ ক্যাপসুলটি ফাঁদের মধ্যে থাকে সেটি প্রতি বছর বদলে নিতে হবে।’’ আম, পেয়ারার মরসুম আসছে। তাই ফাল্গুন মাস থেকেই এই ফাঁদ পেয়ারা ও আম গাছগুলিতে টাঙাতে বলা হয়েছে চাষিদের। কয়েকটি ফার্মারস ক্লাবকে বিনামূল্যে এই ফাঁদ দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের এলাকার চাষিদের এই ফাঁদ ব্যবহারের প্রযুক্তি শেখাবেন হাতে কলমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন