ছাত্রদের নাড়ি নক্ষত্রের খোঁজ রাখেন শিক্ষকেরা

রোগ চিহ্নিত করে সঠিক ওষুধ প্রয়োগেই আসছে ধারাবাহিক সাফল্য। গাঁ-গঞ্জ থেকে আসা ছেলে-মেয়েরাও হেলায় পেরিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার হার্ডলগুলি। ফরাক্কার ডিপিএস এনটিপিসি স্কুলের পড়ুয়ারা টেক্কা দিচ্ছে শহরের নামি-দামি স্কুলের পড়ুয়াদের। তবে সাফল্যের কৃতিত্বে কোনওভাবে নিজেরা ভাগ বসাতে রাজি নন শিক্ষকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:১৯
Share:

ফরাক্কা দিল্লি পাবলিক এনটিপিসি হাইস্কুল। — নিজস্ব চিত্র

রোগ চিহ্নিত করে সঠিক ওষুধ প্রয়োগেই আসছে ধারাবাহিক সাফল্য। গাঁ-গঞ্জ থেকে আসা ছেলে-মেয়েরাও হেলায় পেরিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার হার্ডলগুলি। ফরাক্কার ডিপিএস এনটিপিসি স্কুলের পড়ুয়ারা টেক্কা দিচ্ছে শহরের নামি-দামি স্কুলের পড়ুয়াদের। তবে সাফল্যের কৃতিত্বে কোনওভাবে নিজেরা ভাগ বসাতে রাজি নন শিক্ষকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘শিক্ষক থেকে পড়ুয়া, এমনকী অভিভাবকরাও এই কৃতিত্বের অঁশীদার।’’

Advertisement

গত তিন বছরে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির দুটি বড় পরীক্ষাতে শুধু ১০০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী পাশই করেনি, মুর্শিদাবাদ জেলার সমস্ত সিবিএসই স্কুলকেই ছাপিয়ে গিয়েছে এই স্কুলের সাফল্য।

পাশের হার খুবই মামুলি তথ্য। গত তিন বছরে দশম শ্রেণিতে সব বিষয়ে ১০০ শতাংশ নম্বর অর্থাৎ সিজিপিএ পেয়েছে বেশ কয়েকজন করে ছাত্র।

Advertisement

দ্বাদশ শ্রেণিতেও গত তিন বছরে পাশের হার প্রায় ১০০ শতাংশ। প্রতিবারই ৯০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে বেশ কয়েকজন পড়ুয়া। আর এ বছর ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে স্কুলের ছাত্র স্বপ্ননীল দত্ত। তাঁর বাবা এই স্কুলেরই গণিতের বিভাগীয় প্রধান।

১৯৯৩ এনটিপিসি তাদের পুরনো ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি তুলে দেয়। ক্যাম্পাসের মধ্যেই চালু হয় ডিপিএস। এ রাজ্যে সর্বপ্রথম দিল্লি পাবলিক স্কুল এটিই। প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় এক হাজার পড়ুয়া রয়েছে স্কুলে। শিক্ষক ৪৭ জন। রয়েছে চারটি অত্যাধুনিক পরীক্ষাগার। লাইব্রেরি ঠাসা ১৮হাজার বইয়ে।

শুরু থেকেই স্কুলে রয়েছেন,বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান সুশান্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, শিল্প শহর ফরাক্কায় শিক্ষার পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু এনটিপিসির কর্মী দিন দিন কমছে। স্কুলের অর্ধেকের বেশি পড়ুয়াই আসে আশপাশের গ্রামাঞ্চল ও বিড়ি শিল্পাঞ্চল থেকে। ধুলিয়ান , অরঙ্গাবাদ, ঝাড়খন্ডের পাকুড়, বারহারোয়া-সহ পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে বহু ছাত্র-ছাত্রী।

কিন্তু, সাফল্যের মূল মন্ত্র কী? সুশান্তবাবুর কথায়, “আমাদের স্কুলেও কিন্তু পিছিয়ে পড়া ছাত্র রয়েছে অন্য আর পাঁচটা সাধারণ স্কুলের মতোই। কিন্তু, ঠিকমতো চালনা করতে পারলে তারাও যে তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো ফল করতে পারে, তার প্রমাণ তো আমরা পেয়েছিই। অবশ্য তার জন্য পড়ুয়াদের পাশাপাশি আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত অলোচনা করি। এই সমন্বয়টাই সবচেয়ে জরুরি।” তাঁর মতে বছরের শুরুতেই সারা বছরের পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করাও জরুরী।

ইতিহাসের শিক্ষক জয়ন্ত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, অভিভাবকেরা সকলেই সচেতন তা কিন্তু নয়। কিন্তু, তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করাটাই আমাদের কাজ। তিনি বলছেন, ‘‘প্রতি বুধবার স্কুলের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে আলোচনা হয়। পড়ুয়া ধরে ধরে তার দুর্বলতা চিহ্নিত করা, এবং তাদের ঘাটতিকে সংশোধন করা হয়। সাফল্যের চাবিকাঠি সেটাই।”

বছর তিনেক আগে স্কুলে অধ্যক্ষ হয়ে এসেছেন কমলেশ কুমার জয়সওয়াল। তিনি বলছেন, “স্কুলের বড় সম্পদ তার শৃঙ্খলা এবং পড়ুয়াদের মধ্যে শিক্ষক ভীতি কাটানো। ভয় কাটিয়েই জয় করতে হয় তাদের মন।’’ তাঁর মতে এটাই সাফল্যের রসায়ন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন