গুলিবিদ্ধ আমজাদ। নিজস্ব চিত্র
ভোরের আলো ফুটেছে। পাইকারি মাছ বাজারের বাইরে কয়েক জন খুচরো মাছ বিক্রেতা। চায়ের দোকানে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের ভিড়।
বাইকে করে দুই যুবকের আগমন। এ দৃশ্য এমনই চেনা যে, সে দিকে বিশেষ কারওর নজর ছিল না। কিন্তু, চমক ভাঙল গুলির শব্দে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখা গেল তির বেগে বেরিয়ে গেল বাইকটি। চা-দোকান থেকে কিছুটা দূরে মাটিয়ে লুটিয়ে এক যুবক। রক্ত গড়াচ্ছে রাস্তায়। ঘটনার আকস্মিকতায় থমকে পড়ে করিমপুর জামতলা বাজার। রবিবারের ঘটনা।
বেলা বাড়তে জানা যায়, নিহতের নাম আমজাদ মণ্ডল (৪৫)। সে পড়শি মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানা এলাকার বাসিন্দা। ডোমকলের কামড়দিয়ারে সে পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রি করে। সেও একটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত। জামিনে মুক্ত ছিল সে। এই ঘটনার পরে করিমপুর এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, বাইরের সমাজবিরোধীরা এই এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। করিমপুর এলাকার পাইকারি মাছ বাজারটি পাট্টাবুকা এলাকায়। আশপাশের নানা বাজারের খুচরো মাছ বিক্রেতারা সেখান থেকেই মাছ কিনে নিয়ে যান। করিমপুর লাগোয়া ডোমকলের বিভিন্ন এলাকার মাছ বিক্রেতারাও এখান থেকেই মাছ কিনে নিয়ে যান। সেই বাজারেই মাছ কিনতে যাচ্ছিল আমজাদ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভোর থেকেই মাছ বিক্রেতারা ভিড় জমান মাছের বাজারে। এ দিনও ভিড় জমতে শুরু করেছিল। বাজার থেকে কিছুটা দূরে সাইকেলে করে যাচ্ছিল আমজাদ। তখনও মাছ কেনা হয়নি। সেই সময় করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের দিক থেকে একটি বাইকে করে আসে দুই যুবক। বাইকটি তার সামনে দাড়ায়। বাইকের এক জন আরোহী খুব কাছ থেকে তার বুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। বাইক আরোহীদের মুখ ঢাকা ছিল না। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আমজাদের। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। ছুটে আসেন মাছ ব্যবসায়ীরা। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে পুলিশও। স্থানীয় না হওয়ায় প্রথমে তার পরিচয় জানা যায়নি। পরে অন্য মাছ বিক্রেতারা চিনতে পেরে তার বাড়িতে খবর দেন। করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত বলে ঘোযণা করা হয়। মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য শক্তিনগরে পাঠিয়েছে পুলিশ।
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আমজাদের স্ত্রী সাবিনা বিবি এ দিন করিমপুর থানায় ন’জনের নামে নালিশ করেন। ঘটনার পর করিমপুরে আসেন তেহট্টের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল ও ডোমকল থানার আইসি নীহার রঞ্জন রায়। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুই আগে ডোমকলের কামড়দিয়ার এলাকায় মরজেম মণ্ডল নামে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় আমজাদ-সহ তার তিন ভাইয়ের নামে অভিযোগ করা হয়েছিল। সেই অভিযোগে জেলও খেটেছে আমজাদ। আট মাস আগে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায় সে। বাড়ি ফিরে এলাকায় মাছ বিক্রি করছিল সে। পুলিশের ধারণা, পুরনো শত্রুতার জেরে সে খুন হতে পারে। আমজাদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।