এখনও জলমগ্ন কান্দি, নবদ্বীপের বহু এলাকা

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও জলমগ্ন দুই জেলার বহু এলাকা। এখনও জলবন্দি বহু পরিবার। দ্রুত জল সরলেও কোথাও কোথাও জমে রয়েছে জল। জমা জলে পোকামাকড়, গাছগাছা লি পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৮
Share:

এখনও জল জমে নবদ্বীপের পাঁচমাথায়। ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও জলমগ্ন দুই জেলার বহু এলাকা।

Advertisement

এখনও জলবন্দি বহু পরিবার। দ্রুত জল সরলেও কোথাও কোথাও জমে রয়েছে জল। জমা জলে পোকামাকড়, গাছগাছা লি পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। যা দেখে অসুখ-বিসুখ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় ভাগীরথী, জলঙ্গি ও চূর্ণির জলস্তর কমছে। ফলে বন্যার জল দ্রুত সরতে শুরু করেছে। ভাগীরথী, অজয়, জলঙ্গির জলস্তর এখন বিপদসীমার নীচ দিয়ে বইছে। ফলে নদিয়ার নবদ্বীপ, কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া, শান্তিপুর, চাকদহ, হরিণঘাটা, রানাঘাট সর্বত্রই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সেচ দফতরের এসডিও সুবীর রায় জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও কিছু কিছু জায়গায় জল জমে রয়েছে।

Advertisement

এর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন মায়াপুর, প্রতাপনগর-সহ গঙ্গার ধার বরাবর রানিরচড়া, বৈষ্ণবপাড়া, জাহ্নবীপাড়া, পোড়াঘাট, ফাঁসিতলা, ফুলবাগান, ৬েৈেমণিপুর ঘাটের কিছু অঞ্চল। পুরসভা অঞ্চলের মধ্যে রাধাবাজার, পাঁচমাথামোড়, গানতলা, গোবিন্দবাড়ি, ব্রজানন্দ গোস্বামী রোড, বাঁশবাগান, বুড়োশিবতলা-সহ বহু এলাকার মানুষ এখনও জলবন্দি। এর মধ্যে বুড়োশিবতলা দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের বাস চলাচল করে এবং এটি নবদ্বীপের অন্যতম ব্যস্ত রেলস্টেশনে যাওয়ার অন্যতম প্রধান রাস্তা। অন্য দিকে, গানতলা এবং রাধাবাজার শহরের অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র। এই সব এলাকায় জল জমে থাকায় ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন।

ভৌগলিক কারণে নবদ্বীপের কিছু অঞ্চল গঙ্গার থেকেও নিচু। ফলে ওইসব এলাকায় বন্যার জল ঢোকায় তা বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকার বর্জ্য, গাছগাছালি পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। ফলে এখন ওই এলাকায় বাস করা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

তবে ওই এলাকায় জল সরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতাপনগর, প্রাচীন মায়াপুর, রানিরচড়া, বসাকপাড়া প্রভৃতি অনেক এলাকায় জল এখনও হাঁটুর উপরে। তবে যে সব এলাকায় জল জমে আছে সেখানে পাম্প চালিয়ে জল সরানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ তবে এখনও গঙ্গার জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকায় পাম্প করা জল ফের শহরে ঢুকে আসার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ দিকে, জল সরতে শুরু করায় ত্রাণশিবির থেকে বন্যা দুর্গত মানুষ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। কল্যাণী মহকুমার বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া আঠারো হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র চার হাজার মানুষ বিভিন্ন শিবিরে রয়েছেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেওয়া বারোশো লোকের মধ্যে এখন রয়েছেন শ’চারেক মানুষ। রানাঘাটে আড়াই হাজার মানুষের মধ্যে পাঁচশো জন ত্রাণশিবিরে আছেন।

এ দিকে, যাঁরা ঘরে ফিরছেন তাঁদের যাতে ফেরার পর কোনও সমস্যা না হয় তারজন্য প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বন্যামুক্ত এলাকাগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, ব্লিচিং পাউডার ছাড়ানো, পানীয় জল যাতে দূষিত না হয় তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ দিকে, মুর্শিদাবাদে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কান্দিতে এখনও জলবন্দি প্রায় দশ হাজার পরিবার। কান্দি মহকুমার কান্দি ও ভরতপুর-২ ব্লক এলাকায় এখনও জল নামেনি। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহকুমায় প্রায় ২০টি ত্রাণশিবির চলছে। তবে ভরতপুর-১ ব্লক এলাকায় পল্লিশ্রী জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালপুর ও বেড়বাড়ি গ্রামে তিনটি ত্রাণশিবির খোলা রাখা হয়েছে। ওই তিন ত্রাণশিবিরে দিনের বেলায় বাসিন্দারা না থাকলেও রাতে থাকছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা দীপক বিশ্বাস, অঙ্কিতা সরকারদের কথায়, “টানা দু’সপ্তাহ ধরে বানের জল ঘরে ঢেউ খেলছিল। তাই বাড়িতে ঢুকতে এখন ভয় লাগছে। এই বুঝি ভেঙে পরবে। তাই দিনের বেলায় বাড়িতে কাজ করে রাতে ত্রাণশিবিরে থাকছি।”

এ দিকে, দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের ক্ষোভ রয়েছেই। বাসিন্দাদের দাবি, “সরকারি ত্রাণশিবিরে আছি ঠিকই। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল মিলছে না। শিশুদের শুকনো খাবারের ব্যবস্থা নেই।” যদিও অভিযোগ মানতে চাননি ভরতপুর-২ বিডিও অর্ণব চির্না।

কান্দি মহকুমাশাসক বিজিন কৃষ্ণ জানান, স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকার নলকূপ ও পুকুরগুলি জীবাণুমুক্ত করতে চুন ও ব্লিচিং পাওডার ছড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখান থেকেও বন্যা পরবর্তী কালে বাসিন্দাদের কী কী করা প্রয়োজন তার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন