সকার ছিনিয়ে নবদ্বীপ মাতিয়ে দিল বিশ্বকর্মা

দ্বিতীয়ার্ধের দশ মিনিট। মাঝমাঠের জটলা থেকে বলটা পেয়েই বিপক্ষের দু’জনকে শরীরের দোলায় কাটিয়ে রাজু দেবনাথ মাপা পাস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মিলন সঙ্ঘের বক্সের বাঁ দিকে রুনিকে লক্ষ করে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
Share:

দ্বিতীয়ার্ধের দশ মিনিট। মাঝমাঠের জটলা থেকে বলটা পেয়েই বিপক্ষের দু’জনকে শরীরের দোলায় কাটিয়ে রাজু দেবনাথ মাপা পাস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মিলন সঙ্ঘের বক্সের বাঁ দিকে রুনিকে লক্ষ করে।

Advertisement

পাসটা পেয়েই চকিতে মাটি ঘেঁষা শট নিলেন বিশ্বকর্মা ক্লাবের স্ট্রাইকার রুনি। মিলন সঙ্ঘের গোলকিপার পীযূষ মল্লিককে নড়াচড়ার কোনও রকম সুযোগ না দিয়ে তীব্র গতিতে দ্বিতীয় বারের পাশ দিয়ে গিয়ে বল জড়িয়ে গেল জালে।

গো-ও-ও-ও-ল!

Advertisement

প্যাক কোম্পানির মাঠের প্রায় পনেরো হাজার দর্শকের গর্জনে প্রায় তখনই ঠিক হয়ে গেল, নবদ্বীপ মিউনিসিপ্যাল সকার কাপ জয়ের হ্যাটট্রিক আর করা হল না মিলন সঙ্ঘের। পরপর তিন বার ট্রফি জিতে ক্লাবের শো-কেসে সকার কাপ পাকাপাকি তুলে রাখার ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাঁড়াল ‘ডার্ক হর্স’ বিশ্বকর্মা ক্লাব। প্রথম বছর খেলতে নেমেই খেতাব ছিনিয়ে নিল তারা। মঙ্গলবার মিলন সঙ্ঘকে ১-০ গোলে হারিয়ে নবদ্বীপ মিউনিসিপ্যাল সকার কাপ সিজন-থ্রি চ্যাম্পিয়ন হল বিশ্বকর্মা।

প্রায় সমশক্তিধর দল হিসেবেই ফাইনালে উ ঠছিল দুই দল। দু’পক্ষের খেলাই দর্শকদের মন ভরিয়ে দিয়েছে। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়ে ছিল দুই তরফই। শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত মিলন সঙ্ঘ। কিন্তু বিশ্বকর্মার গোলকিপারের তৎপরতায় তা হয়নি। দু’পক্ষই একাধিক বার প্রায় ফাঁকায় গোলের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেনি। বিশ্বকর্মার অন্তত ছ’টি শট বারে লেগে ফিরে যায়।

চব্বিশ দলের সকার কাপ গত এক মাসে যেন ফুটবল উৎসবের রঙিন জামা পরিয়ে দিয়েছিল নবদ্বীপ শহরকে। বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে পঁচিশ জন বিদেশি খেলোয়াড় ছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন নামী-দামি ক্লাবের খেলোয়াদের নিয়মিত উপস্থিতি গোটা টুর্নামেন্টকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল। নিট ফল, প্রতি ম্যাচেই পাঁচ-সাত হাজার দর্শক। ক্লাব সমর্থকদের উন্মাদনায় নিরাপত্তার কথা ভেবে শীতেও ঘাম ছুটেছিল পুলিশের।

ফাইনালে অতিথি হিসাবে মাঠে এসেছিলেন ভারতীয় ফুটবলের দুই অবিস্মরণীয় জুটি মানস ভট্টাচার্য এবং বিদেশ বসু। ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক স্বরূপ দাসও। নিজের খেলোয়াড় জীবনে এই প্যাক কোম্পানির মাঠে খেলার কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিদেশ।

মঙ্গলবার নবদ্বীপে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সেই সঙ্গে আবার সকার কাপের ফাইনাল। তাই ক্রিসমাসে নবদ্বীপ-মায়াপুরে উপচে পড়া পর্যটকের ভিড়, পৌষের রোদে পিঠ দিয়ে গঙ্গা বা জলঙ্গির পাড়ে পিকনিক, ‘পয়লা কাটের’ নলেন গুড় কিংবা আসল দার্জিলিঙ লেবুর মায়াবি স্বাদ নিয়ে বছরের শেষ সপ্তাহে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না কারও। বরং এক মাস ধরে চলা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিয়েই আগের রাত থেকে উত্তেজনায় ফুটছিল নবদ্বীপ।

আসলে, সকার কাপকে নিছকই একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট ভাবলে ভুল ভাবা হবে। এটা আসলে এলাকার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ, পুলিশ প্রশাসন, পুরসভা, ব্যবসায়ী, ক্লাবকর্তা এবং খেলোয়াড়দের সম্মিলিত একটা চেষ্টা। একটা স্বপ্ন। প্রচেষ্টা ফুটবলকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। ফুটবল জোয়ারে ভাসার। নতুন প্রতিভা তুলে আনার। কিংবা বছর কুড়ির সেই বাকশক্তিহীন জাগলার অমিত বিশ্বাসের স্বপ্নকে মেলে ধরার। ফাইনাল খেলা শুরু হওয়ার আগে যিনি ঠায় বল নাচিয়ে কুড়িয়ে নিলেন গ্যালারির মুগ্ধতা। দিন গড়িয়ে বিকেল ৫টায় শেষ হল খেলা। তখন সন্ধ্যা নামছে। একটু বাদেই মিশমিশে শীতরাত। কিন্তু তা বলে শহরের পথে বিশ্বকর্মার বিজয় শোভাযাত্রা আটকায়নি। মিলন সঙ্ঘ বোধহয় ধরেই নিয়েছিল, অনায়াসে জিতবে। ক্লাবে রাতের চড়ুইভাতির আয়োজনও করা হয়েছিল। হারলেও চড়ুইভাতি বন্ধ হয়নি।

সকার কাপ শেষ। কিন্তু ঘোর কাটাতে নবদ্বীপের বোধহয় এখনও কয়েকটা দিন লাগবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement