ঘুমপাড়ানি গুলিতে থামল তার ‘বাঁদরামি’

কখনও তার এক ধাক্কায় চিৎপাত পথচলতি বৃদ্ধ। কখনও আবার আচমকা গায়ের উপর লাফিয়ে পড়ে আঁচড়ে-কামড়ে রক্তারক্তি কাণ্ড। গত এক মাস ধরে তার অপরাধের তালিকা বাড়ছিলই। কিন্তু ‘দুষ্কৃতী’ অধরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৭
Share:

ধরা পড়ার পরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

কখনও তার এক ধাক্কায় চিৎপাত পথচলতি বৃদ্ধ। কখনও আবার আচমকা গায়ের উপর লাফিয়ে পড়ে আঁচড়ে-কামড়ে রক্তারক্তি কাণ্ড।

Advertisement

গত এক মাস ধরে তার অপরাধের তালিকা বাড়ছিলই। কিন্তু ‘দুষ্কৃতী’ অধরা। তার ভয়ে রাস্তায় বেরনোই দায় হয়ে পড়েছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের। শেষমেশ রবিবার তাকে কব্জায় আনল ‘পুলিশ’। বন দফতরের বহু চেষ্টায় ঘুমপাড়ানি গুলিতে রবিবার কাত হল শাখামৃগ।

বনদফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নবদ্বীপ শহরের রানিচড়া, রানিচড়া কলোনি, পীরতলা-সহ আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ১৭টি হনুমানের একটি দল। বনদফতরের আধিকারিকরা বলছেন, অত্যাচারী হনুমানটিই ওই দলপতি। বয়স এই বছর পনেরো। যে কোনও কারণেই হোক, মানুষ দেখলেই তেড়ে যাচ্ছিল পুরুষ হনুমানটি।

Advertisement

এলাকাবাসীর দাবি, প্রায় এক মাস ধরে এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছিল ওই হনুমানটি। কখনও পথচলতি মানুষকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় তো কখনও কামড়ে দেয়। তার আক্রমণে গত এক মাসে অন্তত পক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এখনও নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ৪ জন। এলাকার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে হনুমানের ভয়ে লোকজন একা বেরোতে ভয় পাচ্ছিলেন।

বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বনদফতর হনুমানটিকে ধরার উদ্যোগ নেয়। বন দফতরের এক কর্তার কথায়, “এক মাস ধরে হনুমানটিকে খাঁচাবন্দি করার চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি। খাবারের টোপ দিয়ে খাঁচায় ঢোকানোর চেষ্টা করেছি। নাহ, তাতেও কিছু হয়নি। দেখা গিয়েছে অন্য কোনও হনুমান ঢুকে বসে রয়েছে। এ রকম ঘটনা অন্তত তিন বার ঘটেছে। তাই শেষপর্যন্ত ঘুমপাড়ানি গুলি করে হনুমানটাকে বশে আনার ব্যবস্থা করতে হল।”

দুষ্কৃতীকে ধরতে রবিবার চলে আসেন খোদ নদিয়া-মুর্শিদাবাদ বনবিভাগের এডিএফও মৃণালকান্তি রায়, কৃষ্ণনগরের রেঞ্জ অফিসার অমলেন্দু রায়। তবে তাকে ধরা কী এত সহজ! কখনও সে লুকিয়ে পড়ে দলের অন্যদের আড়ালে তো কখনও বাড়ির ছাদে, ট্যাঙ্কের নীচে, এখানে ওখানে। ‘‘ওকে চিহ্নিত করতেই ঘন্টাখানেক সময় লেগে যায়। দল থেকে আলাদা করতে শেষমেশ পটকা ফাটানো হয়। তার পর ঘুমপাড়ানি গুলি। পরপর দু’টো। একটা হাতে এবং অন্যটা পিঠে লাগতেই বাগে আসে সে।’’ যাকে ঘিরে এত হইচই, সেই ‘তিনি’ এখন কৃষ্ণনগরে বনদফতরের রেঞ্জ অফিসে চিকিৎসাধীন।

এলাকার দাগি অপরাধী ধরা পড়ায় খুশি নবদ্বীপের বাসিন্দারা। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বনদফতরের কর্তারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন