শোকার্ত নিহত ভবতোষ গাইনের আত্মীয়-পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসবেই তাদের চেনেন বাসিন্দারা। এক সঙ্গেই সুপারির ব্যবসা করত তারা। এক জন ব্যবসা ছেড়ে দিলেও বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি।
শনিবার রাতে প্রতিমা ভাসানের পরে অন্যদের সঙ্গে ক্লাবে বসেছিল এক বন্ধু ভবতোষ গাইন (৩৫)। রাত তখন সাড়ে ১১টা। অন্য বন্ধু সুরজিৎ মিস্ত্রি এসে ডাকে ভবতোষকে। তারা বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই গুলির শব্দ। ক্লাব থেকে বাকিরা বেরিয়ে দেখেন, মাটিতে লুটিয়ে রয়েছেন রক্তাত্ত ভবতোষ। তাঁর কপালে গুলির দাগ। তার সামনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে পাপাই। পুলিশ সপরজিৎ ওরফে পাপাইকে গ্রেফতার করে। চাকদহ থানার দুবড়া মথুরগাছি এলাকার ঘটনা।
ভবতোষের এক জমিতে পাপাইরা জলসা করতে চেয়েছিল। রাজি হননি তিনি। এ ছাড়া কালী প্রতিমা ভাসানের সময় পাপাই মেয়েদের অশ্লীল ইঙ্গিত করছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। সেই সময় ভবতোষ তাকে নিষেধ করে। পুলিশের ধারণা রাগের মাথায় পাপাই বন্ধুকে গুলি করে। পাপাইও পুলিশকে তেমনটাই জানিয়েছে।
ভবতোষের ভাই পরিতোষ গাইন পুলিশের কাছে পাপাইয়ের বিরুদ্ধে তাঁর দাদাকে খুনের অভিযোগ জানান। পরিতোষবাবু বলেন, “আমিও সেই সময় ক্লাবেই ছিলাম। দাদাকে ক্লাব থেকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায় পাপাই। তার পরেই গুলির শব্দ শুনতে পাই। বাইরে বেড়িয়ে দেখি দাদা মাটিতে পড়ে রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ‘‘পাপাইরা আমার দাদার জায়গায় একটি জলসা করবে বলেছিল। দাদা তাতে আপত্তি জানিয়েছিল। এই নিয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। সেই কারণেই পাপাই দাদাকে খুন করেছে।”
ভবতোষ এবং পাপাই আগে সুপারির ব্যবসা করত। সম্প্রতি পাপাই সুপারির ব্যবসা ছেড়ে দেয়। তবুও দু’জনের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে কালী প্রতিমা ভাসানে সবাই নাচানাচি করছিল। পাপাই তখন নাচতে নাচতে মেয়েদের দিকে চলে যাচ্ছিল। আপত্তি জানিয়ে ভবতোষ তাকে চলে যেত বলেন। এই বলে ভবতোষ ক্লাবে চলে আসেন। সাড়ে ১১টা নাগাদ পাপাই তাঁকে ডেকে নিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ ভবতোষকে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদের সঙ্গে ছিল পাপাইও। চিকিৎসকরা ভবতোষকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার পরেই পাপাই পালায়। কিন্তু এলাকায় ফিরলে স্থানীয় মানুষ তাকে ধরে পুলিশে খবর দেন।
ক্লাবের এক সদস্য মিলন ঘরামি বলেন, “গুলি করেছে শুনে আমি বাড়ি থেকে ছুটে এসে ভবতোষকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। আমাদের সঙ্গে পাপাইও গিয়েছিল। ভবতোষ বেঁচে নেই শুনে পালায়।” পাপাই পুলিশকে জানায়, সে ভবতোষকে খুন করতে চায়নি। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ভয় দেখাতে গিয়ে অসাবধানবশত সেখান থেকে গুলি ছুটে যায়। ঘটনার সময় সে মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তাই, কী করে কী ঘটেছে, তা বুঝতে পারেনি সে। কোথা থেকে সে আগ্নেয়াস্ত্র পেল, তা অবশ্য জানতে পারেনি পুলিশ। এসডিপিও উত্তম ঘোষ এ দিন বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। শীঘ্রই সব জানা যাবে।”