আতঙ্ক নিয়ে মাধ্যমিকে ফুলবাড়ির পরীক্ষার্থীরা

ইতিকার বাড়ির পাশেই বাড়ি রচনা সাহার। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে খেতে বসেছিল। সুজিতের বাড়িতে হই-চই শুনে ভয়ে আর খাওয়া হয়নি তার।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৪
Share:

পরীক্ষার প্রথম দিন। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বার হয়েছিল ইতিকা সাহা। বেরিয়ে দেখে বাড়ির উল্টো দিকে শয়ে-শয়ে লোকের জটলা। বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে অভিযুক্ত সুজিত মণ্ডলের বাড়ি ‘ভাঙতে’ এসেছে তারা। মায়ের হাত ধরে রাস্তার ওই অংশটুকু পার হওয়ার সময় আতঙ্কে কাঁপছিল সে। পরীক্ষার হলে বসেও সেই কাঁপুনি যায়নি। ইতিকা বলে, ‘‘পরীক্ষা কী দেব বুঝতে পারছি না। কিছুতেই মন থেকে ঘটনাগুলো সরাতে পারছি না। সারাক্ষণ ভয় করছে।’’

Advertisement

ইতিকার বাড়ির পাশেই বাড়ি রচনা সাহার। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে খেতে বসেছিল। সুজিতের বাড়িতে হই-চই শুনে ভয়ে আর খাওয়া হয়নি তার। পরীক্ষা কেমন হল জানতে চাইলে রচনা বলে, ‘‘সবই ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ সব তালগোল পাকিয়ে গেল। পরীক্ষায় কী যে লিখেছি, ভগবানই জানে!’’

শনিবার সন্ধ্যায় হাঁসখালির ফুলবাড়িতে পাড়ার সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান দেখার সময় খুন হন বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। সেই ফুলবাড়িতে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনেক। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, খুনের খবর পাওয়ার পর থেকে আতঙ্ক চেপে বসেছে স্থানীয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মনে। অভিযুক্তদেরও বাড়ি ওই একই এলাকায়। ফলে, সারাক্ষণ কী হয়, কী হয়, সেই ভয় কাজ করছে তাদের মনে। একই পড়া বার বার পড়েও মনে রাখতে পারছে না।

Advertisement

বিধায়ক যে সময় খুন হন, সে সময় বাড়িতে মাধ্যমিকের পড়া পড়ছিল প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল। বাবার মুখে গুলি চলার খবর শুনে পড়া ফেলে সবার সঙ্গে সেও ছুটেছিল
পুজোর মাঠে। ‘‘রক্ত-কান্না-ছোটাছুটি দেখার পর আর পড়ায় মন বসছে না। মনে থাকছে না কোনও পড়াই।’’— বলছে প্রিয়াঙ্কা।

সন্ধ্যা হলে বাড়ি থেকে বার হতে ভয় লাগছে আর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তনুশ্রী মণ্ডলের। আতঙ্ক এতটাই তার মনে সেঁধিয়েছে যে খেতে বা পড়তে পারছে না। তনুশ্রী বলে, ‘‘সারাক্ষণ মনে হচ্ছে, কেউ এসে এই বুঝি আমাকেও মেরে ফেলল।’’

আর মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারির বাড়ির উল্টোদিকে থাকে স্বর্ণময়ী বিশ্বাস। মাস পাঁচেক আগে স্বর্ণময়ীর বাবা মারা গিয়েছেন। তার মা পূরবী বলেন, ‘‘বাপমরা মেয়েটা ধাক্কা সামলে ওঠার আগে, পরীক্ষার মুখে এই অবস্থা। খুনের দিন থেকে এলাকায় মানুষের ভিড় লেগে আছে। নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ—একের পর এক। ছোট মেয়ে। এই পরিস্থিতিতে কি পড়ায় মন বসাতে পারে?’’

আর স্বর্ণময়া বলছে, ‘‘বিধায়ক খুনের খবর শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। তার পর থেকে ভয়টা কিছুতেই যাচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন