পুতুল-পুতুল: নাচ দেখতে ভিড় খুেদদের। নিজস্ব চিত্র
হাঁটুর উপরে আঙুলগুলো অভ্যস্ত ভঙ্গিতে নেচে যাচ্ছে। যেন পুতুলের সুতো খেলছে হাতে।
মাঠের এক কোণে চেয়ার। সামনে কিছু দূরে মঞ্চে একের পর এক পুতুল নাচ হচ্ছে। তাতেই ভারী খুশি বছর অষ্টআশির জিতেন মণ্ডল। পুতুল নাচের গ্রাম মুড়াগাছা কলোনির আদি শিল্পীদের মধ্যে এক মাত্র জীবিত সদস্য। বিড়িতে ফুঁক-ফুঁক টান দিয়ে তিনি বলেন, “লোকে আবার নাকি পুতুল নাচ দেছে। ভাল খবর!”
পুতুল নাচের দলগুলো নতুন করে ডাক পাচ্ছে এখন। সরকারের থেকে শিল্পী ভাতাও পায় অনেকে। কন্যাশ্রী-সহ নানা প্রকল্পের প্রচারে ডাক পড়ে মাঝে মধ্যে। শিল্পী রঞ্জন রায়, সদানন্দ সরকারেরা বলছেন, “একটা সময়ে গাঁয়ে ৫০টারও বেশি দল ছিল। রাজ্য জুড়ে আমরা দাপিয়ে বেড়াতাম। কিন্তু টিভির ধাক্কায় সব শেষ হয়ে গেল। অনেকেই পুতুল বেচে অন্য কাজে চলে গিয়েছে। দিনমজুর হয়েছে। তবে তিন-চার বছর ধরে ফের নানা জায়গা থেকে ডাক আসছে।”
দেশভাগের পরে যশোহর, খুলনা, বরিশাল থেকে চলে আসা কয়েকটি পরিবার ১৯৫১ নাগাদ মুড়াগাছা কলোনিতে থাকতে শুরু করেছিল। কিন্তু কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। অনিল মিস্ত্রি নামে এক জন পুতুল নাচ জানতেন। জিতেন মন্ডল, জিতেন হালদার, নিশিকান্ত চক্রবর্তীদের নিয়ে তিনিই তৈরি করেন নতুন দল ‘ভারতমাতা’। এক সময়ে এত চাহিদা ছিল যে বাইরে থেকে লোক এনে দল চালাতে হত। তারাই আবার এখান থেকে শিখে গিয়ে বর্ধমান, নবদ্বীপ, শিলিগুড়িতে দল খুলে বসে। সকলকে নিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মেলা। চলবে সোমবার পর্যন্ত।
২০১৪ থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে প্রায় বিলুপ্ত বোলান গানও। মুর্শিদাবাদের নওদায় সর্বাঙ্গপুরে বোলানের ১২টি দল ছিল এক সময়ে। এখন পাঁচটিতে নেমেছে। গ্রামের আদি গুরু, প্রয়াত ভবতোষ বিশ্বাসের ছেলে নিমাই বিশ্বাস এখনও দল চালাচ্ছেন। তিনি জানান, লোকশিল্পীরা এখন মাসিক হাজার টাকা সরকারি ভাতা পান। সরকারি অনুষ্ঠানে গাইলে জোটে আরও হাজার টাকা। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজ সাথী, শিক্ষাশ্রী, মৎস্য চাষ ও উন্নত প্রথায় কৃষিকাজের প্রচারেও বোলান ব্যবহার হচ্ছে। ভোটেও বরাত দেন প্রার্থীরা। তাতে কৌলীন্য গিয়েছে বটে, প্রাণ তো বাঁচছে!