আমি চেয়ারম্যানের পাড়ার লোক কিন্তু!

কোনও রকমে হাসি চেপে গলা চড়ল রঘুনাথগঞ্জের আইসি সৈকত রায়েরও, ‘‘চেয়ারম্যান কি আপনাকে হেলমেট না পরেই বাইক চালাতে বলেছেন? দুর্ঘটনা ঘটলে কে বাঁচাবে? পরের দিন থেকে হেলমেট ছাড়া যেন বাইক চালাতে না দেখি!”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:২৬
Share:

এমন দৃশ্য বদলাবে কবে? মঙ্গলবার রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

হেলমেট না পরেই মোটরবাইক ছোটাচ্ছিলেন এক যুবক।

Advertisement

বছরের প্রথম দিনেই পুলিশ তাঁকে আটকায়, ‘‘হেলমেট কোথায়?’’

দাপটের সঙ্গে জবাব এল, ‘‘জানেন, আমি কিন্তু চেয়ারম্যানের পাড়ার লোক!’’

Advertisement

কোনও রকমে হাসি চেপে গলা চড়ল রঘুনাথগঞ্জের আইসি সৈকত রায়েরও, ‘‘চেয়ারম্যান কি আপনাকে হেলমেট না পরেই বাইক চালাতে বলেছেন? দুর্ঘটনা ঘটলে কে বাঁচাবে? পরের দিন থেকে হেলমেট ছাড়া যেন বাইক চালাতে না দেখি!”

হেলমেট-সচেতনতায় সোমবার বহরমপুরের রাস্তায় নেমেছিলেন ‘যমরাজ’। মঙ্গলবার রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ বেছে নিয়েছিল শহরের যানবহুল এলাকা ফুলতলা। সেখানেই নতুন বছর উপলক্ষে মিষ্টিমুখ করাচ্ছিল পুলিশ। সঙ্গে চলছিল সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফ নিয়ে সচেতনতার কাজও।আর নতুন বছরের প্রথম দিনেই মিষ্টির সঙ্গে কারও জুটল তারিফ, পিঠ চাপড়ানি। কাউকে আবার মিষ্টির সঙ্গে গিলতে হল ভর্ৎসনাও।

এক ব্যাগ গোলাপ, নববর্ষের গ্রিটিংস কার্ড আর এক ঝুড়ি লাড্ডু নিয়ে মঙ্গলবার ফুলতলায় হাজির হয় রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও। রাস্তায় পুলিশ কর্তাদের দেখে খরিবোনার অসিকুল শেখের তখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। ফুলতলায় এ ভাবে যে তাঁকে পুলিশের খপ্পরে পড়তে হবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। মোটরবাইকে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও দুই শিশু। পুলিশের ঘেরাটোপে বাইক নিয়ে অসিউল তখন না পারছেন এগোতে, না পারছেন পিছিয়ে আসতে। ঠিক সেই সময় এক পুলিশকর্মী তাঁর দিকে এগিয়ে দিলেন লাল গোলাপ, গ্রিটিংস কার্ড ও লাড্ডু। খাতিরের বহরে তখন তাঁর ভিরমি খাওয়ার জোগাড়।

তার পরেই শুরু হল প্রশ্নবাণ— ‘হেলমেট নেই কেন? আপনার স্ত্রী, দুই শিশুর জীবনের কোনও দাম নেই বুঝি? আবার কবে আপনাদের হুঁশ ফিরবে?’ অসিকুল তখন তোতলাচ্ছেন, ‘‘না, মানে, ইয়ে স্যর, ভুল হয়ে গিয়েছে। পরের বার থেকে আর এমনটা হবে না।’’

ইতিমধ্যে মির্জাপুরের দিক থেকে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন সোলেমান শেখ। তিনি যাবেন সুভাষ দ্বীপে, পিকনিকে যোগ দিতে। এই প্রথম পুলিশকর্মীদের মুখে হাসি দেখা গেল। বাইকের চালক ও আরোহী সকলেরই মাথাতেই হেলমেট। এক পুলিশকর্মী লাড্ডু নিয়ে এগিয়ে যেতেই সোলেমান বলেন, ‘‘হেলমেট মাথায় ছিল বলেই এক দিন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচেছি। তার পর থেকে বাড়ির সকলের জন্যই হেলমেট কিনে ব্যবহার করছি।”

ঠিক তখনই সেই যুবককে থামিয়ে তাঁর হাতে গোলাপ, মিষ্টি ধরিয়ে এক পুলিশকর্মী জানতে চান, ‘‘হেলমেট নেই কেন?’’ দিনের মোক্ষম জবাবটা আসে তাঁর কাছ থেকেই, ‘‘জানেন, আমি চেয়ারম্যানের পাড়ার লোক।” যা শুনে জঙ্গিপুরের চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমার পাড়ার লোক বলে তিনি হেলমেট পরবেন না? কী কাণ্ড, বলুন তো! লোকটিকে আমার দেখার ইচ্ছে রইল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন