Murshidabad Unrest

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন, জানাবেন কেন্দ্রকেও! ধুলিয়ান ও শমসেরগঞ্জ ঘুরে ‘কর্তব্য পালন’ করার আশ্বাস রাজ্যপালের

মুর্শিদাবাদের হিংসাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখে রাজ্যপাল জানান, স্থানীয়দের সব দাবি তিনি উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলবেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০১
Share:

(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার মুর্শিদাবাদের হিংসাকবলিত এলাকা ধুলিয়ান এবং শমসেরগঞ্জ ঘুরে দেখেন তিনি। কথা বলেন ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে। তার পরেই রাজ্যপাল জানান, নিজের ‘কর্তব্য’ পালনে তিনি ‘অবিচল’! শুক্রবার মালদহের বৈষ্ণবনগরের আশ্রয়শিবির এবং শনিবার মুর্শিদাবাদের কিছু এলাকা ঘুরে দেখে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও জানান তিনি।

Advertisement

সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে অশান্তির জেরে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ, সুতি এবং ধুলিয়ানের অনেক বাসিন্দা গঙ্গা পেরিয়ে ও পারে মালদহে আশ্রয় নিয়েছেন। শুক্রবার তাঁদের সেই শিবিরে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। শনিবার তিনি যান মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের উপদ্রুত এলাকায়। পরে যান ধুলিয়ানেও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রাজ্যাপাল বলেন, ‘‘আমি যা দেখেছি, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে যা শুনেছি, তা থেকে মনে হয়েছে পাশবিক অত্যাচার ঘটেছে! সভ্য সমাজে মানুষ এই পরিস্থিতিতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।’’

রাজ্যপালের কথায়, ‘‘ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে কোনও ভাবেই এই ধরনের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলতে পারে না। লুট হয়েছে, সন্ত্রাস চলেছে।’’ বোসের মতে, ‘‘আমি বুঝতে পেরেছি জনগণ কী চাইছে। আমি সঠিক জায়গায় এই বার্তাটি পৌঁছে দেব।’’ রাজ্যপাল মনে করেন, উভয় সরকারের (রাজ্য এবং কেন্দ্র) উচিত মানুষের জীবন এবং সম্পত্তি রক্ষা করা। বোস জানান, যে ভয়ের পরিবেশ চলছে, তা কেটে যাবে। রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর যা কর্তব্য পালন করা উচিত, তা তিনি করবেন বলেও জানান বোস।

Advertisement

মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে কি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন? রাজ্যপাল জানান, এই বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। একই সঙ্গে জানান, স্থানীয়দের সব দাবি তিনি উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দেবেন। উল্লেখ্য, শুক্রবার মালদহে রাজ্যপাল যখন আশ্রয়শিবিরে যান, তখন বাইরে দফায় দফায় স্থানীয়েরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শনিবারও একই ছবি দেখা যায়। রাজ্যপাল ধুলিয়ান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই স্থানীয়দের একাংশ পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। তাঁদের দাবি, পুলিশ রাজ্যপালকে তাঁদের কাছে আসতে দেয়নি। যার ফলে নিজেদের অভিযোগের কথা রাজ্যপালকে জানাতে পারেননি তাঁরা। বিএসএফ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয়দের মূলত তিনটি দাবি, দোষীদের উপযুক্ত বিচার, শান্তি ফেরানো এবং স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প। রাজ্যপাল জানান, স্থানীয়দের সব অভাব-অভিযোগ-দাবি উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দেবেন। তিনি এ-ও জানান, রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনও প্রচুর মানুষ ভুক্তভোগী।

শুক্রবার মালদহের আশ্রয়শিবির ঘুরে দেখে রাজ্যপাল যান ফরাক্কার গঙ্গাভবন গেস্ট হাউসে। সেখানে রাতে ছিলেন তিনি। সকালে সেখান থেকে যান শমসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে। অশান্তির আবহে নিহত বৃদ্ধ হরগোবিন্দ এবং তাঁর ছেলের চন্দন বাড়িতে যান। জাফরাবাদের সেই নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী পারুল কাঁদতে কাঁদতে রাজ্যপালকে বললেন, ‘‘আমার সব হারিয়েছে। আমরা ঘুমোতে পারছি না। আপনি দয়া করে কিছু করুন।’’ তাঁর কথা শুনে রাজ্যপাল তাঁকে আশ্বস্ত করেন। শনিবার জাফরাবাদের নিহত বৃদ্ধের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যেরাও। সব শুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনায় আরও এক জনের মৃত্যু হয়। মৃতের নাম ইজাজ আহমেদ। সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্রের বাড়ি সুতিতে।

শনিবার ধুলিয়ানের বেতবোনাতেও গিয়েছিলেন মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। সেখানে স্থানীয় মহিলাদের একাংশ তাঁদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ এবং দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। সেই ধুলিয়ানে যান রাজ্যপালও। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে কথা বলে, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর বিকেলে মালদহ থেকে ট্রেনে চেপে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement