প্রতীকী ছবি।
পূর্ব মেদিনীপুর এবং মুর্শিদাবাদের পরে এ বার নদিয়া। ওই দুই জেলার জেলাশাসকেরা ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দফতরে নির্দেশিকা পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতনের জন্য জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। একই পথে হাঁটতে চলেছে নদিয়াও।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ), অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন), চার মহকুমাশাসক এবং ১৮ জন বিডিও-কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, কর্মীদের বেতন যাতে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে হয়, তা দেখতে হবে। এমনকি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকাও জমা রাখতে হবে ওই ব্যাঙ্কে।
জেলা সমবায় দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, এটা ব্যাঙ্কের জন্য একটা বড় ব্যাপার। মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব মেদিনীপুরে ব্যাঙ্কে কোনও নির্বাচিত বোর্ড নেই। সেখানে জেলাশাসকেরাই প্রশাসক হিসেবে রয়েছেন। ফলে সেখানকার জেলাশাসকেরা ব্যাঙ্ককে উজ্জীবিত করতে বাড়তি পদক্ষেপ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নদিয়ার ক্ষেত্রে তো জেলাশাসক প্রশাসক নন, ফলে এটার একটা আলাদা মাত্রা রয়েছে।
বছরখানেক ধরেই রাজ্য সরকার সমবায় দফতরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখছে। কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিগুলিকে ব্যাঙ্কে উন্নীত করা বা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সমবায় সম্মেলন করাই প্রমাণ করে, সমবায়ের প্রতি সরকার কতটা আগ্রহী। ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শিবনাথ চৌধুরী জানাচ্ছেন, এ বছরের একেবারে প্রথম দিকে মুখ্যমন্ত্রী নদিয়া জেলায় প্রশাসনিক সভা করেন। সেই সভাতেই সরকারি কর্মীদের মাইনে যাতে সমবায়ের মাধ্যমে হয়, সেই বিষয়ে কথা হয়। ২০১১ সাল থেকে ব্যাঙ্কটি অর্থ দফতরের নিবন্ধীকৃত। ওই বছরেই ব্যাঙ্কটি ইলেকট্রনিক উপায়ে বেতন দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
দফতরের কর্তাদের দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মতো এই ব্যাঙ্কেরও নিয়মিত অডিট হয়। উল্টে সমবায় ব্যাঙ্কের ঋণ আদায়ের পরিমাণ অন্য যে কোনও ব্যাঙ্কের তুলনায় ভাল। অন্য ব্যাঙ্কগুলি যখন অনাদায়ী ঋণ নিয়ে জেরবার, তখন সেই সমস্যা এই ব্যাঙ্কে নেই।
জেলার কৃষি দফতরের আধিকারিকেরাই জানাচ্ছেন, বহু দিন ধরেই সমবায় ব্যাঙ্ক সামাজিক দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করে চলেছে। বড় ব্যাঙ্কগুলির তুলনায় এই ব্যাঙ্ক কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বেশি সংখ্যক চাষিদের ঋণ দেয়। জেলার কৃষি ঋণের প্রায় ৪১ শতাংশই দেওয়া হয় এই ব্যাঙ্ক থেকে। সমবায়ের মাধ্যমে তৈরি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বিপুল ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কটি সরকারি স্বীকৃতিও আদায় করেছে।
শিবনাথবাবু জানান, এই মুহূর্তে ব্যাঙ্কের আমানতের পরিমান ১২৫০ কোটি টাকা। জেলাশাসকের এই উদ্যোগের ফলে সেই আমানতের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।
সরকারি কর্মীদের বেতন এই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে হলে বাড়ি বানানো বা গাড়ি কেনার ঋণ দেওয়ার পরিমাণও বাড়বে। এর ফলে ব্যাঙ্ক অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারবে। তার উপরে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকাও যদি রাখা হয়, রাতারাতি ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। আরও বেশি পরিমাণ চাষি ও গ্রামীণ মহিলাদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। তাঁরা বেশি করে ঋণ পাবেন।
এখন জেলায় এই ব্যাঙ্কের মোট ২৩টি শাখা রয়েছে ব্যাঙ্কের। রয়েছে একাধিক এটিএম মেশিনও। ফলে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই হবে না বলে কর্তাদের দাবি। রাজ্য সমবায় দফতরের সেন্ট্রাল জোনের যুগ্ম নিবন্ধক মহম্মদ ইনাসউদ্দিন বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের দফতর জেলাশাসকদের এ ব্যাপারে জানাচ্ছিল। শেষমেশ নদিয়ার জেলাশাসকের এই উদ্যোগে আখেরে ব্যাঙ্কের ভাল হবে।’’