নগরজীবনে মা-দিদার হাতের ছোঁয়া অমিল

হাতে তৈরি বড়ির দাম বেশি, স্বাদও

শীত মানেই বড়ি দিয়ে আলু ফুলকপির ঝোল, সিম-বেগুন, পাঁচ মিশালি চচ্চড়ি, কচুর শাক, বা শোল মাছের ঝাল। আর গরম ভাতে ঘি আর কালোজিরে বা পোস্ত দেওয়া ছোট্ট ছোট্ট মুসুরির ডালের বড়িভাজা হলে তো এক থালা ভাত নিমেষে শেষ! 

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৬
Share:

যন্ত্রে তৈরি বড়ি শুকোনো চলছে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

ফ্ল্যাটবাড়ির মডিউলার কিচেন। ননস্টিক কড়াইে রান্না চলছে। পালংশাকে কলাই ডালের বড়ি দেওয়ামাত্র মায়ের হাতের রান্নার গন্ধ পেলেন শুভ্রা। সেই যে হাতে করে ছাদে বড়ি শুকোতে দিতেন মা!

Advertisement

শীত মানেই বড়ি দিয়ে আলু ফুলকপির ঝোল, সিম-বেগুন, পাঁচ মিশালি চচ্চড়ি, কচুর শাক, বা শোল মাছের ঝাল। আর গরম ভাতে ঘি আর কালোজিরে বা পোস্ত দেওয়া ছোট্ট ছোট্ট মুসুরির ডালের বড়িভাজা হলে তো এক থালা ভাত নিমেষে শেষ!

গ্রাম থেকে শহরে আসা শুভ্রার ইচ্ছে হয়, নিজের হাতে একটু বড়ি দিতে। কিন্তু ব্যস্ত নগরজীবনে মা-ঠাকুমার মতো ডাল ভিজিয়ে, বেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ পিঠে মেখে বড়ি দেওয়ার সময় বা জায়গা— কোনওটাই নেই এখন। সকাল হলেই স্বামী, স্ত্রী আর সন্তানের ছোট্ট সংসারে তিন জন তিনদিকে। কিন্তু শিকড়ের টান এখনও মনকে নাড়া দেয়। তাই শীত পড়লেই খেজুর গুড়ের মতো কলাইয়ের ডালের বড়ির কথাও মনে হয়।

Advertisement

ধুবুলিয়ার একটি স্কুলে চাকরি করেন শুভ্রা। বাজারে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে নিজের হাতে বড়ি বানিয়ে বেচতে আসেন এক মহিলা। সে বড়ির স্বাদ অমৃত। তাঁর কাছ থেকেই বরাবর বড়ি কেনেন শুভ্রা। ধুবুলিয়ার বড়িগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর বরকে বলেছিলেন, বাজার করার সময় এক প্যাকেট বড়ি আনতে। কিন্তু সে বড়িতে শিস-পালং চচ্চড়ি মায়ের রান্নার মতো স্বাদ হল না। বড়ির যে স্বাদই নেই।

দোকানিকে জিগ্যেস করে জানা গেল, বাজারে এখন দু’ধরনের বড়ি পাওয়া যায়। একটি হাতে বানানো আর অন্যটি মেশিনে। মেশিনে বানানো বড়ির স্বাদ কখনওই হাতে বানানো বড়ির মতো হবে না।

কৃষ্ণনগর গোয়ারী বাজারে দীর্ঘ দিন বড়ি বিক্রি করছেন স্বপন সাহা, জয়দেব সাধুখাঁ। এ দিন স্বপন বলেন, ‘‘সস্তার বড়ি অনেকেই চান। তার দাম হাতে তৈরি বড়ির প্রায় অর্ধেক। যোগানও অঢেল। তাই মেশিনের বড়িও রাখি।’’ তিনি আরও জানান, সাধারণত সস্তার হোটেল আর যাঁরা পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করেন, তাঁরা কেনেন মেশিনের বড়ি। তবে কদর এখনও সেই হাতে বানানো বড়িরই।

কথাটা যে মিথ্যে নয়, তা বোঝা গেল জয়দেবের কথাতেও। তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর আগে যখন এক কেজি বড়ির দাম আড়াই টাকা ছিল, তখন থেকে নিজে হাতে বড়ি বানিয়ে বিক্রি করছি। আজ সেই বড়ির কেজি আড়াইশো টাকা! অথচ, মেশিনে বানানো বড়ি দেড়শো টাকাতেই মেলে। তবুও আমার তৈরি সব বড়িই বিক্রি হয়ে যায়।’’

তার পরেও কিন্তু হাতে তৈরি বড়ির বাজারে থাবা বসাচ্ছে মেশিনে তৈরি সস্তার বড়ি। স্বাদের চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে জোগান এবং ব্যবসায় লাভের অঙ্ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন