করাতকলে চেরাই করার জন্য কাঠের গুঁড়ি ঢুকিয়েছিলেন। খেয়াল করেননি নিজের মাথায় বাঁধা গামছা-র একটি কোণা জড়িয়ে যাচ্ছে করাতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যন্ত্রের হ্যাঁচকা টানে বছর চল্লিশের ওই শ্রমিকের মাথা ঢুকে যায় যন্ত্রের কাঁটার মতো অংশের ভিতর। কার্যত গুঁড়ো হয়ে যায় মাথার খুলি!
শান্তিপুরের সূত্রাগর-নতুনহাটের একটি করাত কলে মঙ্গলবার সকালে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই করাত কলে কাজ করতেন ডাবরেপাড়ার সুশান্ত প্রামানিক। করাতকলে কাঠের গুঁড়ি ঠেলে দেওয়ার কাজ করতেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, কাঠের গুঁড়ো থেকে মাথা বাঁচাতে সুশান্ত তাঁর মাথার চুল গামছা দিয়ে ঢেকে রাখতেন পাগড়ির মতো করে।
এ দিন কাঠের মাপ ঠিক আছে কি না দেখার জন্য তিনি ঝুঁকেছিলেন। মাথার গামছার একাংশ খুলে করাতের দাঁতের সঙ্গে আটকে যায়। তাঁর মাথা কলের ভিতর ঢুকে যায়। অন্য শ্রমিকরা প্রথমে ভ্যাবাচাকা খেয়ে যান। হুঁশ ফিরতে তাঁরাই দ্রুত মেশিন বন্ধ করে দেন। কিন্তু তত ক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। আহতকে উদ্ধার করে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগে রাস্তায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত সুশান্ত শান্তিপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ করে কিছু দিন গৃহশিক্ষকতাও করেছেন। বিয়ে করেননি। তাঁর এমন মৃত্যু চোখের সামনে দেখে তাঁর সহকর্মীরা স্তব্ধ। কল মালিক সুনন্দশঙ্কর চৌধুরী বলছেন, “সবসময় আনন্দে থাকতেন। কোনও বিবাদে ছিলেন না। ওঁর হাসিমুখটাই কেবল মনে পড়ছে।’’ দুর্ঘটনার খবরে হাসপাতালে যান তাঁর দুই দাদা প্রশান্ত ও জয়ন্ত। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে সুশান্তর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।