স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ, প্রসব তাই ঘরেই

নবদ্বীপের মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের অধীন ফকিরডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ বেশ কয়েক বছর ধরে। সম্বল বলতে ভাগীরথী পেরিয়ে বর্ধমানে কালনা হাসপাতালে যাওয়া।

Advertisement

বিমান হাজরা ও সুস্মিত হালদার

সুতি ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩০
Share:

প্রতীকী ছবি।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা পড়েছে প্রায় তিন দশক। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবও মুখ থুবড়ে পড়েছে সুতির বহুতালি গ্রাম পঞ্চায়েতে। গত অক্টোবর ৫৫ জন প্রসূতির সকলেই প্রসব করেছেন বাড়িতে। বহু দিন ধরে বন্ধ হিলোড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। ফলে হাড়োয়া পঞ্চায়েত এলাকাতেও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ধাক্কা খেয়েছে। অক্টোবরে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ৬৬ শতাংশেরও নীচে। বাড়িতে প্রসব করানোর ঝুঁকি নিয়ে গত দু’মাসে ১০টি সদ্যোজাতের প্রাণ গিয়েছে এই দুই এলাকায়।

Advertisement

নবদ্বীপের মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের অধীন ফকিরডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ বেশ কয়েক বছর ধরে। সম্বল বলতে ভাগীরথী পেরিয়ে বর্ধমানে কালনা হাসপাতালে যাওয়া। পাশের গ্রাম বাহিরচরা। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুর ব্লক প্রাথমিক হাসপাতাল। জেলা সদর হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। বাহিরচরায় এ বছর ১৫৩ জন প্রসূতির মধ্যে ৬৭ জনের প্রসব হয়েছে বাড়িতে।

বহুতালি ও হিলোড়া দুই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই এক সময়ে চালু ছিল অন্তর্বিভাগ। তা প্রায় তিন দশক ধরে বন্ধ। বহুতালি থেকে আহিরণে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অন্তত ১৮ কিলোমিটার দূরে। হারোয়ার গ্রামগুলি থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার। ওই এলাকায় কাজ করা একটি অসরকারি সংস্থার কো-অর্ডিনেটর শ্রীময়ী ভট্টাচার্যের মতে, এর ফলেই বাড়িতে প্রসবের প্রবণতা। তবে আপাতত প্রসূতিদের চার মাইল দূরে বীরভূমের রাজগ্রামে এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে ব্যক্তিগত গাড়িতে। কিন্তু স্থায়ী প্রসূতি সদন চালু করা না গেলে বাড়িতে প্রসব থামানো যাবে না।

Advertisement

সুতি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার আবার বলছেন, ‘‘সচেতনতাও বড় সমস্যা। মানুষকে সচতেন করার কাজ যাঁদের, সেই পঞ্চায়েত সদস্যদেরই সন্তান জন্মাচ্ছে বাড়িতে। তা হলে কাকে বোঝাব?’’ বহুতালিতে শিগগির প্রসূতি সদন চালু হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

আহিরণে কিন্তু গড়ে ৯০ শতাংশ প্রসব হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সাদিকপুরে অক্টোবরে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়েছে ৬৬-র মধ্যে ৫৯, নভেম্বরে ৭৬-র মধ্যে ৬৮। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওই দুই এলাকার দূরত্ব ২-৪ কিলোমিটার। সাদিকপুর পঞ্চায়েতের প্রধান ফরিদা বিবির কথা, “প্রসূতিদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা তৈরি হবে গ্রাম সংসদগুলিতে।”

বন্যাপ্রবণ ফকিরডাঙা এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় ফকিরডাঙা-ঘোলাপাড়া পঞ্চায়েতের মানুষের সম্বল গিয়েছে। সচেতন করা গিয়েছে বলেই সেখানকার ৪১ জন প্রসূতির ৩৯ জন প্রসব করেছেন হাসপাতালে। বাহিরচরায় প্রতি বছরই ভাগীরথীর জল উপচে রাস্তা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ফোন করলে নিশ্চয়যান আসে বিশ কিলোমিটার দূরের মহেশগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে। তাই বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা বেশি। গ্রামে শিক্ষার হারও খারাপ। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ মহিলা না থাকায় আশাকর্মী বা সেকেন্ড এএনএম নিয়োগ করা যায়নি। বিষয়টি নজরে আসার পরে স্বাস্থ্যকর্তারা প্রসূতিদের হাসপাতালমুখো করার চেষ্টা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন