Coronavirus

medicine: পরীক্ষার নাম নেই, ওষুধের বিক্রি তুঙ্গে

সরকারি ভাবে দৈনিক করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা যতটা না বেড়েছে তার তুলনায় অনেক বেশি বাড়ছে বাজার চলতি ওষুধের বিক্রি।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘরে-ঘরে জ্বর-সর্দিকাশি। করোনা পরীক্ষা ক’জনই বা করাচ্ছেন?

Advertisement

ফলে, সরকারি ভাবে দৈনিক করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা যতটা না বেড়েছে তার তুলনায় অনেক বেশি বাড়ছে বাজার চলতি ওষুধের বিক্রি। সেই তালিকায় যেমন আছে জনপ্রিয় প্যারাসিটামল তেমনই ভিটামিন-সি, মাল্টিভিটামিন, অ্যান্টিবায়োটিকও।

গত সাত-দশ দিন ধরে জেলায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত জেলায় সনাক্ত হওয়া সংক্রমিতের সংখ্যা ৪০০। গত ২ জানুয়ারি সেখানে সংখ্যাটা ছিল মাত্র ৪৮। কিন্তু এ তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। চিকিৎসক থেকে শুরু করে ওষুধের ব্যবসায়ী সকলেই মনে করছেন, বাস্তবে যত মানুষ করোনার এই তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিত হচ্ছেন, তাদের একটা বড় অংশ পরীক্ষা না করিয়ে নিজেদের মতো ওষুধ কিনে খাচ্ছেন।

Advertisement

এর ফলে গত দিন দশেকের মধ্যে বেশ কিছু ওষুধের বিক্রি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। তাঁদের দাবি, সাত দিনে শুধু প্যারাসিটামলের বিক্রিই বেড়েছে অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় একশো গুণ। আবার ভিটামিন-সি, মাল্টিভিটামিন, জিঙ্ক জাতীয় ওষুধের পাশাপাশি কৃমির ওষুধের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ গুণ। ভাল রকম চাহিদা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অন্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধে। বিক্রি বেড়েছে গার্গল করা বা গরম জলের সঙ্গে ভাপ নেওয়ার ওষুধেরও। তবে গত বারের মতো এ বার ডক্সিসাইক্লিন-জাতীয় ওযুধের তেমন চাহিদা নেই বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ওষুধের খুচরো ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই সব ওষুধ কিনতে যাঁরা দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন তাঁদের বেশির ভাগের কাছেই কোনও চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশন থাকছে না। তাঁরা নিজেদের মতো করে ওষুধ কিনে নিয়ে গিয়ে খাচ্ছেন বা পরিবারের সদস্যদের খাওয়াচ্ছেন। নদিয়া জেলার অন্যতম বড় ওষুধের ডিলার বা হোলসেল বিক্রেতা গোপীনাথ দে-র মতে, “প্রায় ৬০ শতাংশ লোকের হাতে প্রেসক্রিপশন নেই। যাঁরা করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন তারা পরীক্ষা করা তো দূরের কথা, চিকিৎসকের কাছে পর্যন্ত যাচ্ছেন না। বিরাট সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হওয়ার কথা চেপে গিয়ে নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধি অনুযায়ী ওষুধ খাচ্ছেন। অনেকে ঘরে বন্দি না থেকে ওষুধ খেয়ে টুকটাক বাইরে ঘুরেও বেড়াচ্ছেন।”

একই কথা জানাচ্ছেন একাধিক নামি ওষুধ সংস্থার ডিলার তথা জেলার একাধিক খুচরো ওষুধের দোকানের মালিক অংশুমান দে। তাঁর কটাক্ষ, “এখন সবাই বিশেষজ্ঞ। সকলেই নিজেদের মতো করে লক্ষণ চিহ্নিত করে ওষুধ খাচ্ছেন। এতে বেশ কিছু ওষুধের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এটা মারাত্মক প্রবণতা।”

এই প্রবণতা জারি থাকলে আগামী দিনে নানা অতি প্রয়োজনীয় ওযুধের ভাঁড়ারে টান পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। গোপীনাথ দে-র মতে, “এ ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। না হলে পরে সত্যি প্রয়োজনের সময়ে ওষুধের আকাল হতে পারে।” তবে ওষুধ সংস্থার প্রতিনিধিরা অবশ্য সে কথা বলছেন না। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিসিন সেলস রিপ্রেজ়েন্টেটিভ ইউনিয়নের নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক তন্ময় ভট্টাচার্য বলছেন, “অনেক ওষুধের চাহিদাই অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তার জন্য জোগান নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।” তাঁর ব্যাখ্যা, “তৃতীয় ঢেউ যে আসতে চলেছে, ওষুধের চাহিদা যে লাফিয়ে বাড়তে পারে তা আগে থেকে আন্দাজ করে সেই মতো উৎপাদন ও মজুত করা হয়েছে।”

তবে ওষুধের জোগানে টান পড়ুক বা না পড়ুক, এই ধরনের ‘স্বেচ্ছাচার’ রোগীর ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা। মেডিসিনের চিকিৎসক আমোদপ্রসাদ যাদব বলছেন, “আমি নিজে বেশ কয়েক জনকে জানি যাঁদের শরীরে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ থাকলেও তাঁরা পরীক্ষা করাননি। নিজেদের মতো করে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছেন।” তাঁর মতে, “চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুড়ি-মুড়কির মত কোনও ওষুধই খাওয়া ঠিক নয়। সাধারণ প্যারাসিটামলের মাত্রাও কিন্তু পরিস্থিতির উপরে ভিত্তি করে ঠিক করতে হয়। আর তা ঠিক করতে পারেন এক জন চিকিৎসকই।”

আমোদপ্রসাদের আক্ষেপ, “হয়তো অনেকে তৃতীয় ঢেউকে আমল দিতে চাইছেন না। এটা বিপজ্জনক। অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই, কিন্তু উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খান। ”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন