durga puja

Durga Puja: ইউনেস্কোর ঘোষণাতেই দুর্গার খোঁজে পর্যটক

কৃষ্ণনগর শহরের ঘূর্ণী ও নতুনবাজার পাল পাড়ায় কমবেশি ২৫০ থেকে ৩০০ মৃৎশিল্পীদের বাস। যাঁদের অনেকেরই সংসার চলে প্রতিমা তৈরি করে।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১২
Share:

পুতুলপট্টির এই দুর্গা পাড়ি দেবে আমেরিকায়। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র।

সম্প্রতি দুর্গাপুজোকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। ইতিমধ্যে সে খবর এসে পৌঁছেছে মৃৎশিল্পের আঁতুড়ঘর কৃষ্ণনগরেও। গত দু’বছর ধরে কোভিড পরিস্থিতিতে অনেক মৃৎশিল্পীরই এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা। শিল্পীদের অনেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ ছেড়ে কেউ মাটির টব বিক্রির দোকান করেছেন, কেউবা আবার মুদিখানা। এমন এক দুঃসময়ে ইউনেস্কোর এই ঘোষণায় আশায় বুক বাঁধছেন কৃষ্ণনগরের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী থেকে শুরু করে প্রান্তিক শিল্পীরাও।

Advertisement

কৃষ্ণনগর শহরের ঘূর্ণী ও নতুনবাজার পাল পাড়ায় কমবেশি ২৫০ থেকে ৩০০ মৃৎশিল্পীদের বাস। যাঁদের অনেকেরই সংসার চলে প্রতিমা তৈরি করে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, বিভিন্ন রাজ্য ছাড়াও বিভিন্ন দেশেও পাড়ি দেয় কৃষ্ণনগরের তৈরি দুর্গা প্রতিমা। পুজোর জন্য বড় দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও ঘরে রাখার জন্য ছোট দুর্গা প্রতিমা তৈরি ও বিক্রি করেন কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা। ইউনেস্কোর এই ঘোষণায় আশায় বুধ বেঁধেছেন তাঁরা। ঘূর্ণীর রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত মৃৎশিল্পী সুবীর পাল বলেন, ‘‘ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করার ফলে বিশ্বের নানা দেশে শুধু পুজোর জন্য নয়, বিভিন্ন মিউজিয়াম-সহ ঘরে রাখার জন্যও দুর্গা প্রতিমার চাহিদা বাড়বে। আর তাতে কাজ পাবেন শিল্পীরা।’’ তবে সেই সঙ্গে সুবীর পাল এও মনে করেন, ‘‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিমা বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিমার মান, পরিবেশবান্ধব রঙের মতো নানা দিক খেয়াল রাখতে হয়, যার জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।’’ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ছোট ছোট দুর্গামুর্তির চাহিদাও যে বেড়েছে, তা জানা গেল ঘূর্ণী পুতুল পট্টির দোকানদারদের কাছ থেকেই। পুতুলপট্টির প্রদীপ বিশ্বাস, জয়ন্ত পালেরা বলেন, ‘‘এমনিতে দুর্গাপূজার মুখে ঘরে রাখার ছোট ছোট দুর্গা প্রতিমার চাহিদা বাড়লেও ওয়ার্ড হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ার পর থেকে দেখছি বাইরে থেকে আসা পর্যটকেরা অনেকেই দুর্গা প্রতিমার খোঁজ করছেন।’’ তাঁরা জানান, সেই কথা মাথায় রেখে এখন তাঁরা ছোট ছোট দুর্গা প্রতিমা তৈরির সংখ্যা বাড়িয়েছেন।

ঘূর্ণীর মৃৎশিল্পী সুদীপ্ত পালের তৈরি বেশ কয়েকটি দুর্গা প্রতিমা প্রতি বছরই বিদেশে পাড়ি দেয়, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাতেও যায় তাঁর তৈরি প্রতিমা। কিন্তু করোনা কালে সেই প্রতিমার বায়না প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে বলে জানান সুদীপ্ত। সুদীপ্তর আশা প্রতিমা তৈরির ব্যপারে সরকার এগিয়ে আসুক বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে, তাতে ঠাকুরের মান বাড়বে। দাম পাবেন শিল্পী।

Advertisement

কৃষ্ণনগরের আনন্দময়ী তলা পালপাড়ার প্রতিমা শিল্পী পরিমল পাল, উজ্জ্বল পাল, নতুনবাজার পাল পাড়ার বাবলা পাল বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিমা কেনেন মূলত স্থানীয়েরা। তাই ওয়ার্ড হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ার খবরে তাঁরা খুশি হলেও এতে প্রতিমার দাম আলাদা ভাবে বাড়ার সম্ভবনা নেই। বরং গত দু’বছরে কোভিডের কারণ দেখিয়ে ক্রেতারা প্রতিমার দাম অনেক কম দিয়েছেন। অথচ প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে।’’

দুর্গাপূজাকে ওয়ার্ড হেরিটেজ ঘোষণার পর যদি এই ব্যাপারে সরকার শিল্পীদের পাশে দাঁড়াক, সেই প্রত্যাশাই তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন