কাদায় পিছলে পথেই শেষ পরীক্ষার্থী

মঙ্গলবার পরীক্ষার প্রথম দিনেই দুর্ঘটনায় মারা গেল সুব্রত। মা প্রভাতী তাই ছেলের দেহ আঁকড়ে বার বার বলে চলেছিলেন, ‘‘কত বার বললাম, সাবধানে চালাবি বাবা। আর পরীক্ষা শেষ হলেই সোজা বাড়ি ফিরবি। আর তুই কিনা ফিরলি এই ভাবে!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৯
Share:

হাহাকার: সুব্রতর (ইনসেটে) মৃত্যুসংবাদ পেয়ে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

মা-বাবাকে প্রণাম করে মোটরবাইকে চেপেছিল উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী সুব্রত সাহা। কিন্তু, পরীক্ষা হলে পৌঁছনোর আগেই শেষ হয়ে গেল সব।

Advertisement

মঙ্গলবার পরীক্ষার প্রথম দিনেই দুর্ঘটনায় মারা গেল সুব্রত। মা প্রভাতী তাই ছেলের দেহ আঁকড়ে বার বার বলে চলেছিলেন, ‘‘কত বার বললাম, সাবধানে চালাবি বাবা। আর পরীক্ষা শেষ হলেই সোজা বাড়ি ফিরবি। আর তুই কিনা ফিরলি এই ভাবে!’’

জলঙ্গির ফরিদপুর গ্রামের বছর আঠারোর সুব্রত এ দিন বাড়ি থেকে কিলোমিটার চারেক দূরে বাসুদেবপুর রাজ্য সড়কে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে মোটরবাইকের পিছনে থাকা তার বন্ধু বিট্টু শর্মাও। তাকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জলঙ্গির ফরিদপুর হাই স্কুলের ওই ছাত্রের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ওই থানার সীতানগর হাইস্কুলে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ফরিদপুর রথপাড়ার সুব্রত বাড়ি থেকে সাড়ে ৮টা নাগাদ বেরিয়েছিল বন্ধু বিট্টুকে সঙ্গে নিয়ে। বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে তার পরীক্ষা কেন্দ্র। নিজেই চালাচ্ছিল সে। রাজ্য সড়ক ধরে দুই বন্ধু হেলমেট পরেই যাচ্ছিল পরীক্ষা কেন্দ্রে। কিন্তু মিনিট কয়েক পরেই বাসুদেবপুর সেনপাড়া এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরে লছিমন ফেলে পালায় চালক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ডোমকলের এসডিপিও সন্দীপ সেন বলেন, ‘‘মোটরবাইক দুর্ঘটনায় এক পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি আমরা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে লছিমনের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই এই দুর্ঘটনা।’’

পুলিশ ওই এলাকায় গত কয়েক দিন ধরেই পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করেছে। তার পরেই এই দুর্ঘটনা।

মাস তিনেক আগে বাইক কিনেছে সুব্রত। কিন্তু তার অনেক আগেই সে বাইক চালানো শিখেছিল বলে দাবি তার পরিবারের। ফলে একেবারে নতুন হাত এমনটা নয়, আবার স্থানীয়দের দাবি, গাড়িতে চাপলেই তার মাথায় থাকে হেলমেট। কম বয়সের ছেলে হলেও দ্রুত বাইক চালানোর অভ্যাস তার নেই। কিন্তু তার পরেও কী ভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা?

ঘটনার সময় রাস্তার পাশেই ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘একটি টোটোর পিছনে ছিল বাইকটি। যাত্রী নামাতে টোটোটি রাস্তায় দাঁড় করাতেই সেটাকে পাশ কাটাতে যায় ওই পরীক্ষার্থীর বাইক। কিন্তু রাস্তায় লেপটে থাকা কাদায় চাকা পিছলে গাড়িটি রাস্তার উপরেই পড়ে।

আর সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি দ্রত গতির লছিমন তার বুকের উপর দিয়ে চলে গেলে জখম হয় সে আর তার বন্ধু।’’ স্থানীয়রা সেখান থেকে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায় সুব্রত।

কিন্তু পাকা রাস্তায় এমন কাদা কোথা থেকে এল?

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় এখন অনেক ইটভাটা গজিয়ে উঠেছে। আর সেই ভাটায় মাটির জোগান দিতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মাটি নিয়ে রাজ্য সড়ক ধরে দিন রাত ছুটে চলেছে ট্রাক্টর। আর তা থেকে মাটি পড়ে পাকা রাস্তা পিছল হয়ে থাকছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন