ইলিশের গন্ধে ম-ম মিড-ডে মিলের পাত

রথযাত্রায় কলাই ডালের জিলিপি আর মুচমুচে পাঁপড়ভাজা। পৌষপার্বণে পিঠে-পুলি ও নলেন গুড়ের বাতাসা।

Advertisement

অনল আবেদিন

লালগোলা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০২:২৪
Share:

মহানন্দে বৃষ্টির দুপুরে । ছবি: নিজস্ব চিত্র

মেনু দিয়ে যায় চেনা!

Advertisement

রথযাত্রায় কলাই ডালের জিলিপি আর মুচমুচে পাঁপড়ভাজা। পৌষপার্বণে পিঠে-পুলি ও নলেন গুড়ের বাতাসা। আর শ্রাবণের শুরুতে? ঠিক ধরেছেন! পদ্মার টাটকা ইলিশ আর গরম ভাত। সঙ্গে আলুর দম। মেনুটা মিড ডে মিলের। স্কুলের নাম লালগোলা এম এন অ্যাকাডেমি উচ্চমাধ্যমিক।

অথচ বছর খানেক আগেও চেহারাটা ছিল অন্যরকম। গরু-ছাগলের সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে পাতলা খিচুড়ি খাওয়াটাই ভবিতব্য ছিল শতবর্ষ প্রাচীন এই স্কুলের। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষাতেও ছবিটা বিশেষ বদলাত না। তবে জনাকয়েক উদ্যোগী শিক্ষকের চেষ্টায় মিড ডে মিলের ওই হতশ্রী চেহারাটা বদলাতে শুরু করে বছর খানেক আগে থেকে। খাবারের মান যেমন বেড়েছে তেমনি উৎসবের দিনগুলিতেও পড়ুয়াদের পাতে পড়ে বিশেষ খাবারদাবার।

Advertisement

গত বছর পৌষ পার্বণের সময় খুদেদের মিড ডে মিলের পাতে পড়েছিল পিঠে-পুলি ও নলেন গুড়ের পায়েস। এ বারের রথযাত্রায় জিলিপি ও মুচমুচে পাঁপড়ের আয়োজন করা হয়। আর গত মঙ্গলবারের মেনুতে ছিল পদ্মার ইলিশ, ভাত আর আলুর দম। গ্রীষ্মে ছাত্রদের ১০ রকমের আম খাওয়ানোর জন্য আমের গাছ ‘বুক’ করা হয়েছিল। কিন্তু গরমের কারণে স্কুলে ছুটি পড়ে যাওয়ায় শিক্ষকদের সেই সাধ আর পূরণ হয়নি। তবে ভরা বর্ষায় ইলিশ খেয়ে বেজায় খুশি স্কুলের পড়ুয়ারা।

মিড ডে মিলের এই চমকে এখন স্কুলের প্রায় সব শিক্ষক হাত মেলালেও প্রথমে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিন শিক্ষক— রবিন মণ্ডল, জাহাঙ্গির মিঞা ও বিরিঞ্চি হালদার। তাঁদের প্রচেষ্টায় মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে খোলা আকাশের বদলে ফাঁকা পড়ে থাকা ঘরের ভিতর মিড ডে মিল খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মিড ডে মিলের উদ্বৃত্ত টাকা এক সময় কয়েক জনের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হত বলে অভিযোগ। ওই খবর জানতে পেরে মিড ডে মিলের নতুন কমিটি সেই ফাঁক ফোঁকর বন্ধ করে দেয়। শিক্ষকেরা পাইকারি দরে শাক সব্জি কেনা শুরু করলে বেশ কিছু টাকা উদ্বৃত্ত হতে শুরু করে। উদ্যোগী শিক্ষকদের কথায়, ‘‘ওই উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে তিন দফায় মিড ডে মিল খাওয়ার টেবিল ও বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়।’’

জাহাঙ্গির মিঞা বলেন, ‘‘ঋতু বদলের সঙ্গে তাল রেখে বাঙালির খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন ঘটে। মিড ডে মিলের খাদ্যোৎসবের মাধ্যমে আমরা শিশুদেরও এই শিক্ষা দিয়ে থাকি। পড়ুয়ারাও তাতে মজা পায়।’’ শিক্ষক রবিন মণ্ডলের বাড়ি মালদহে। সোমবার বাড়ি থেকে ফেরার পথে তিনি এসেছিলেন আড়াইশো টাকা কেজি দরের পোস্ত। সোমবার আলুপোস্তর পরে মঙ্গলবার ইলিশ-ভাত।

মঙ্গলবার পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির প্রায় হাজার খানেক ছাত্রের জন্য পদ্মার ১৬০টি ইলিশ আমদানি করা হয়। ছোট শিশুদের দেওয়া হয় কম কাঁটার পেটির পিস। বেশি কাঁটার গাদা দেওয়া হয় একটু বড় বয়সের ছাত্রদের। তাই নিয়ে নিয়ে ষষ্ট শ্রেণির নুরজামান শেখের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণির প্রমিত দাসের সে কী খুনসুটি। প্রমিতের খোঁচা, ‘‘আরে ইলিশের পেটিতে আর কী স্বাদ আছে! খেতে হলে ইলিশের গাদা খা।’’ নুরজামানের পাল্টা, ‘‘দাদা, গাদা তো কাঁটায় ভরা গো। আসল মজা তো ইলিশের গন্ধে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন