ক্লাসে ভীষণ খিদে পেত

বাবা অজেদুল শেখ বলেছিলেন, দিনমজুরি করে দুই ছেলেমেয়ের পড়া চালাতে পারবেন না। তা শুনেই ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে পড়া ছেড়ে রুজির টানে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেয়। আর মেয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে নিজের পড়া চালাতে থাকে। সেই মেয়ে, বহরমপুর লাগোয়া দৌলতাবাদ এনবিএস হাইস্কুলের রেহেনা খাতুন প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০৩:২৮
Share:

রেহানা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র

বাবা অজেদুল শেখ বলেছিলেন, দিনমজুরি করে দুই ছেলেমেয়ের পড়া চালাতে পারবেন না। তা শুনেই ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে পড়া ছেড়ে রুজির টানে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেয়। আর মেয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে নিজের পড়া চালাতে থাকে।

Advertisement

সেই মেয়ে, বহরমপুর লাগোয়া দৌলতাবাদ এনবিএস হাইস্কুলের রেহেনা খাতুন প্রায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করল। সাতটি বিষয়ের মধ্যে গণিত ও ভূগোল বাদে পাঁচটিতে লেটার। মোট নম্বর ৫৪৯। দৌলতাবাদ থানার মুকুন্দপুর গ্রামের ছাত্র পড়িয়েও এক সময়ে আর পেরে উঠছিল না রেহানা। নিজের পড়ার ক্ষতি হচ্ছিল তার। বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের কাছে গিয়ে বই কিনে দেওয়ার বায়না ধরে সে। এক শিক্ষক তাকে টেস্ট পেপার কিনে দেন। রেহেনার কথায়, ‘‘ওঁরাই বইপত্র থেকে, খাতা-কলম কিনে দিতেন। যে কোনও অসুবিধেয় তাঁরা সাহায্য করতেন। বাড়ি থেকে নোট তৈরি করে নিয়ে আসতেন ওঁরা আমার জন্য।’’

‘‘দাদাও খুব ভাল ছিল পড়াশোনায়। অভাবের কারণে পড়তে পারল না, জানেন’’— সুখের দিনেও বারবার মনে পড়ে যায় রেহানার।

Advertisement

বাড়ি থেকে কয়েক কিমি দূরের স্কুলে হেঁটে যেতে কষ্ট হত। বাড়িতে ভাঙাচোরা একটি সাইকেল ছিল। সেটিকে সারিয়ে নিয়ে তাতেই স্কুল যাতায়াত করত রেহানা। কোনও কোনও দিন খালি পেটেও স্কুল যেতে হত তাকে। রেহেনার মনে পড়ে, ‘‘ক্লাসে প্রচণ্ড খিদে পেত। শিক্ষকদের লজ্জায় বলতে পারতাম না। আমার বন্ধুরা জানত। টিফিনের ভাগ দিত। দোকান থেকেও কিনে খাওয়াত।’’

রেহানা আপাতত চায়, স্কুলের শিক্ষিকা হতে। ‘‘যাতে আমার মতো গরিব ছেলেমেয়েদের বিনা পয়সায় যাতে পড়াতে পারি। সাহায্য করতে পারি। ঠিক যেমনটা আমি পেয়েছি। ’’ ২০১৬ সালে কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে বহরমপুর ব্লক ভিত্তিক ক্যুইজ প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হয়েছিল রেহানা। কন্যাশ্রী প্রকল্পে সাইকেল পাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পায়নি।

কেন?

তার উত্তর রেহানার জানা নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement