উদ্ধারের অস্ত্রে টইটম্বুর মালখানা

রাজনীতির কারবারিরা গলা উঁচিয়ে বলছেন, ‘শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল বছরভর জেলাটাকে অশান্ত করে রেখেছে, অস্ত্র লাগবে না!’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর ও ডোমকল শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৭
Share:

গত ডিসেম্বর থেকে লাগাতার অভিযানে পুলিশের মালখানা ভরে উঠছে ছোট-মেজ অস্ত্রে।

নির্বাচন মানে গুলি-বোমার লড়াই, নির্বাচন মানে খুন-জখম, নির্বাচন মানে রক্তস্রোত— মুর্শিদাবাদের গ্রাম মফসসল এ কথা জানে। কিন্তু সে তো দূরের দিন, তা হলে জেলা জুড়ে এখন এত বারুদের গন্ধ কেন, কেন এত অস্ত্রের ঝনঝনানি?

Advertisement

রাজনীতির কারবারিরা গলা উঁচিয়ে বলছেন, ‘শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল বছরভর জেলাটাকে অশান্ত করে রেখেছে, অস্ত্র লাগবে না!’ পাল্টা বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব— বিরোধীরা তাদের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখতে অস্ত্রেই ভরসা করছে!

কারণ যাই হোক না কেন, বাস্তব এটাই যে গত ডিসেম্বর থেকে লাগাতার অভিযানে পুলিশের মালখানা ভরে উঠছে ছোট-মেজ অস্ত্রে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘গত মাসে জলঙ্গি, নওদা, ইসলামপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় খুন জখমের ঘটনা ঘটে চলেছে নিরন্তর। এর পরের ধাপে জেলায় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান শুরু হবে।’’ জেলা পুলিশের হিসেব বলছে, গত এক বছরে জেলাজুড়ে ৩৭৭টি অস্ত্র, ৮৩৩ রাউন্ড গুলি ও ৪২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডোমকল থেকে শুরু করে রানিনগর, ইসলামপুর, শমসেরগঞ্জ, বেলডাঙা, ভরতপুর-সহ জেলা পুলিশের অভিযান চলছে।

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জলঙ্গির টলটলিতে বেআইনি অস্ত্র বিক্রি করতে এসে পুলিশের জালে ধরা পড়ে সাহেবনগর এলাকার আল্লা রাখা ও ঘোষপাড়ার ছবি শেখ। তাদের কাছ থেকে ৫টি পিস্তল ও একটি পাইপগান এবং চার রাউন্ড গুলি পাওয়া গিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ডোমকলের বাগডাঙায় বল ভেবে খেলতে গিয়ে বোমা ফেটে জখম হয়েছিল এক শিশু। গত ৩ ডিসেম্বর জলঙ্গির ঘোষপাড়ায় দলীয় কর্মীদের বাড়ি বাড়ি ঘোরার সময় দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় খুন হয়েছিল এক তৃণমূল কর্মী। গত ৫ ডিসেম্বর ইসলামপুরে বাসস্ট্যান্ডে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে এক ব্যক্তি জখম হন। ১৭ ডিসেম্বর নওদার বালি এলাকায় দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে শাসক দলের এক পঞ্চায়েত সদস্য জখম হয়েছিলেন। গত ২২ ডিসেম্বর ভরতপুরের গুন্দিরিয়া গ্রামে গ্রাম্য বিবাদকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই শুরু হয়। তার মাঝে পড়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্র জখম হয়েছিল। ২৩ ডিসেম্বর শমসেরগঞ্জে শাসকদলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যু মিছিল চলছেই। দেরিতে হলেও নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। হয়ত তাই কখনও ডোমকল, কখনও জলঙ্গি, কখনও বা শামসেরগঞ্জ থেকে মিলছে অস্ত্র উদ্ধারের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন