পদ্মা ঘেঁষে অপেক্ষা করে মোটরবাইক

নিজের কাজ আর ছেলের শখ মেটাতে বছর পাঁচেক আগে বাইক কিনেছিলেন মিজানুর রহমান। বছর খানেক আগে মিজানুর মারা গিয়েছেন। তার পর থেকে নাবালক ছেলে ওই বাইক নিয়ে নেমে পড়েছে এই ব্যবসায়।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস  

চর পরাশপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ০০:০৬
Share:

চর-পথের ভরসা: ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

হাঁটুজল পদ্মার সরু নালা পেরোলেই বিএসএফের ছাউনি। কিছু বাসি খড় আর হোগলাপাতার ফাঁক গলে হু হু হাওয়া আর কপালচেরা রোদ্দুর। বিএসএফের কড়া অনুশাসন থেকে চোখ ফেরালে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গোটা পনেরো মোটরবাইক।

Advertisement

যাত্রী এলেই পিছনে বসিয়ে চরের আলপথে ধুলো উড়িয়ে ছুটছে। তিন কিলোমিটার পথের জন্য কুড়ি টাকা, গোটা দিনের জন্য নিলে শ’খানেক। জলঙ্গির উদয়নগর খণ্ড এবং চর পরাশপুর যাওয়ার এটাই সাবেক ‘রেট’। না হলে উঁচু নিচু ঢাল আর কাশবন পেরিয়ে হাঁটতে থাকা।

পায়ে পায়ে হাঁটা রাস্তা বৃষ্টির পরেই হারিয়ে যায়। মোষের গাড়ি মেলে কদাচিৎ। অনুরোধের ট্রাক্টর মুখ ভেংচে চলে যায় অনেক সময়ে। ভরসা তাই বিশ টাকার মোটরবাইক। জোড়া সওয়ারি হলে রেট কিছু কম, ত্রিশ টাকা। রাস্তা নেই, নেই যানবাহন। ফলে নেই গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের মতো করেই গড়ে তুলেছেন চরের এই পরিবহণ ব্যবস্থা। গ্রামের বেকার যুবকেরা শখের বাইক ভাড়া দিয়েই কিনছেন বাড়ির কলাটা-মুলোটা। কেউ বা টানছেন আস্ত সংসারটাই।

Advertisement

নিজের কাজ আর ছেলের শখ মেটাতে বছর পাঁচেক আগে বাইক কিনেছিলেন মিজানুর রহমান। বছর খানেক আগে মিজানুর মারা গিয়েছেন। তার পর থেকে নাবালক ছেলে ওই বাইক নিয়ে নেমে পড়েছে এই ব্যবসায়। মিজানুরের পড়শি জাবদুল মণ্ডল বলেন, ‘‘দু’চাকার যানটির দৌলতে ছেলে এখন সংসারের জোয়াল টানছে!’’

চাকা ঘুরলেই সংসার ঘুরছে। চরের বেশ কিছু বেকার যুবকের কাছে এটাই পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক এক বার এক জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে পারলেই পকেটে আসে ৪০ টাকা। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরানো মানুষের কাছে ৪০ টাকা খরচ করে যাতায়াত করাও কম কথা নয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘করতে হয়, জলঙ্গির চর উদয়নগর খণ্ড ও চর পরাশপুর এলাকার মানুষের এ ছাড়া কোনও উপায় নেই যে!’’ বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে ওই দীর্ঘ রুখু পথ পার হয়ে গ্রামে ফেরা প্রায় অসম্ভব।

‘বাবা একটু এগিয়ে দিবি’, অনুরোধের সেই চাহিদা থেকেই এক সময়ে শুরু হয়েছিল বাইক-বাহন। বাইক চালক বাপন মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রথমে কেউ কেউ যাতায়াতের পথে গ্রামের কাউকে দেখলে তুলে নিতেন। প্রায় অগম্য পথে নিরাপদে পৌঁছে খুশি হয়ে তাঁরা দশ-বিশ টাকা দিতেন। ক্রমে সেটাই রেওয়াজ হয়ে গেল। এখন খান পনেরো বাইক খাটে ওই পথে।’’

তবে সারা বছর এই কাজ চলে না। বর্ষা নামলে বন্ধ থাকে চাকা, তখন আবার নৌকা নিয়ে শুরু হয় নতুন পথে চলা। তাতেও চরের বাসিন্দাদের গুনতে হয় কড়ি, ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় ওই তিন কিলোমিটার পথ। জাবদুল বলছেন, ‘‘তখন আমরা আকাশ পানে তাকিয়ে থাকি, কবে বর্ষা বিদায় নেবে, আবার ঘুরবে বাইকের চাকা!’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন