মারণ রোগ তো কী,মেয়ের লড়াই জারি

কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েও প্রাণ খুলে হাসতে পারছে মেয়েটি। এত লড়াইয়ের পর তার জয়টা যে দেখতেই পেল না বাবা। রেজাল্ট বেরনোর দিন দশেক আগেই যে বাবা তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। স্বেচ্ছায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ১৪:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

একে শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ। বাড়ি আর হাসপাতাল। জলের মতো বেরিয়ে যাচ্ছে টাকাপয়সা। কাছের মানুষগুলোর ছটফটানি। আর শেষে বাবার মৃত্যু।

Advertisement

একের পর এক বাধার পাহাড় টপকে, ক্যানসারের সঙ্গে যুঝে উচ্চ মাধ্যমিকের হার্ডল পার হওয়াটা তাই অন্য মাত্রা পেয়েছে রানাঘাটের বাসিন্দা রাজেশ্বরী রায়ের জীবনে। কলাবিভাগে ৩৫৬ পেয়েছে সে।

কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েও প্রাণ খুলে হাসতে পারছে মেয়েটি। এত লড়াইয়ের পর তার জয়টা যে দেখতেই পেল না বাবা। রেজাল্ট বেরনোর দিন দশেক আগেই যে বাবা তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। স্বেচ্ছায়।

Advertisement

রানাঘাটের উত্তর নাসরার বাসিন্দা ছাপোষা রায় পরিবারের সঙ্গে আর পাঁচটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কোনও তফাত ছিল না। রাজেশ্বরীর মা মঞ্জুদেবী জানান, মেয়ে তখন এগারো ক্লাসে। টানা অসুস্থতা যে আসলে ক্যানসার, ধরা পড়ার পরে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। কলকাতার একটি নার্সিংহোমে শুরু হয় চিকিৎসা।

তার পর রানাঘাট আর কলকাতা। কখনও কখনও টানা হাসপাতালে থাকতে হত। ছ’টা কেমোথেরাপি নেয় রাজেশ্বরী। এ দিকে, রাজেশবাবু একটি কারখানায় কাজ করতেন। মঞ্জুদেবী রানাঘাট পুরসভার ঠিকা স্বাস্থ্যকর্মী। ক্যানসারের খরচ টানা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। খরচের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ডাক্তারদের নিষেধ না শুনে মেয়েকে কিছুটা জোর করেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন মঞ্জুদেবী। বাড়িতে ফিরে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখতে হয় তাকে।

খরচের ধাক্কা আর সামলাতে পারছিলেন না রাজেশবাবু। মেয়ের চিকিৎসায় সময় দিতে গিয়ে কারখানার চাকরিটাও চলে যায় তাঁর। সে কথাও প্রথমে বাড়িতে জানতে দেননি তিনি। খরচের ধাক্কা সামলাতে না পেরে স্ত্রীর গয়না বাঁধা দেন রাজেশবাবু। শুধু তা-ই নয়, টাকার জন্য হাত পাততে হয়েছিল পরিচিত অনেকের কাছেই।

এ অবস্থায় কী আর পড়াশোনায় মন বসানো যায়?

মঞ্জুদেবী বলছেন, ‘‘মেয়েটাকে আর কী বলব বলুন। ওর উপর যে ঝড় গিয়েছে, তাতে পাশ করলেই অনেক। ওর বাবা বলত, আমার মেয়ে থাকবে আমার বুক জুড়ে। মানুষটা যে ভিতরে ভিতরে এতটা পুড়ছে বুঝতে পারিনি। আমাদের সঙ্গে কষ্ট কিছুটা ভাগ করে নিলে হয়তো এমনটা হত না।’’

চিকিৎসরা জন্য আরও অর্থের দরকার। অর্থের প্রয়োজনটা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত রাজেশবাবুকে। সেই চাপ নিতে না পেরেই আত্মঘাতী হন তিনি ফল বেরনোর দশ দিন আগে। অশৌচ গেল না, মেয়ের রেজাল্ট বেরলো।

রাজেশ্বরী কিন্তু লড়াই থামাতে রাজি নয়। তার বাবা বেঁচে থাকলে কলেজে কলেজে ঘুরে তিনিই ফর্ম জমা দিতেন। অসুস্থ শরীরে এখন সেই কাজটা রাজেশ্বরীই করছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘আমরা এক প্রকার নিঃস্ব। কী করে পড়াবো জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন