Indian

পাসপোর্ট আটক করে জানাল কাজ করতে হবেই

কোনও দিন এ রোগ ছিল না। কিন্তু ধুলোর দেশে মাস দুয়েক ধরে শ্বাসকষ্টের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আর তখনই বুঝলাম, এদের কাণ্ডকারখানা।

Advertisement

আরব আলি শেখ, আবু ধাবিতে আটক থাকা ভারতীয়

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৬
Share:

আরব আলি শেখ, আবু ধাবিতে আটক থাকা ভারতীয়

গ্রামে আবাদি জমি নেই। চাষ হবে কী করে! স্কুলের প্রথম কয়েক ধাপ পরেই তাই দিনমজুরির কাজে পা বাড়িয়েছিলাম। তাতেই সংসার চলত। কিন্তু এলাকার যা অবস্থা, কাজ তেমন জুটত না। দিন আনি দিন খাই অবস্থা। এলাকায় সব সময় কাজ নেই, সংসারেও টানাটানি ক্রমশ বাড়ছিল। তাই একটু বাড়তি আয়ের স্বপ্নে কান্দির এক এজেন্টের মাধ্যমে গত বছর জানুয়ারি মাসে আমিরশাহীর (সংযুক্ত আরব আমিরশাহী) আবুধাবিতে পাড়ি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে মোহ ভঙ্গ হতে সময় লাগল না। চুক্তিমতো কাজ তো পেলামই না উল্টে শুরু হল ঠকানো। মাস-মাইনে যা বলেছিল তাই দিত, তবে কিন্তু কাজের সময়ের কোনও ঠিক ছিল না। গভীর রাত থেকে ভোর, খাটিয়ে জান আমার কয়লা করে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সব কিছু মানিয়ে নিয়ে মুখ বুজে ছিলাম। টাকাটা তো বাড়িতে পাঠাতে পারছি, নিজেকে এমনই বোঝাতাম। তাই কাজ না ছেড়ে কষ্ট করেও লেপ্টা ছিলাম। সমস্যা পাকল মাস কয়েক আগে। শুরু হল শ্বাসকষ্ট।

Advertisement

কোনও দিন এ রোগ ছিল না। কিন্তু ধুলোর দেশে মাস দুয়েক ধরে শ্বাসকষ্টের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আর তখনই বুঝলাম, এদের কাণ্ডকারখানা। অসুস্থ অবস্থাতেও কাজের কামাই করা যাবে না। শ্বাস নিতে পারছি না কিন্তু কোনো ক্ষমা নেই। স্থানীয় সংস্থা আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকুও করল না। আমি ভেবে দেখলাম এ ভাবে চললে মরে যাব। তাই বাড়ি ফেরা ঠিক করলাম। সে কথা বলতেই বুঝলাম ওরা আমাকে ছাড়বে না। তাই মনে মনে তখন থেকেই ওই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

চিকিৎসা না করানোর ফলে এক দিন ঘরে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। বাধ্য হয়ে তখন আমার সহকর্মীরা আমাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে গেল। বলা হয়েছিল সেটি সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু সেখানে এক দিন চিকিৎসার পর আমায় ধরিয়ে দেওয়া হল ৪০ হাজার টাকার বিল। সে টাকাও আমাকেই মেটাতে হবে। কিন্তু অত টাকা কোথায়! টাকা দিতে পারব না শুনে ওরা আর চিকিৎসাই করাল না, বাবতে পারেন! হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে তাই একা একা ভুগছিলাম। প্রায় বন্দি-দশা। ও দিকে মুর্শিদাবাদে আমার পরিবারের লোকজন এজেন্টের কাছে গিয়ে তদ্বির শুরু করল।

Advertisement

আমিও কোম্পানির কর্তাদের কাছে চিকিৎসা করানোর দাবি জানিয়ে বাড়ি ফিরতে চাইলাম। বললাম, চিকিৎসা করিয়েই ফিরব। কিন্তু ওরা সে সব কথা কানে না তুলে পাসপোর্ট-সহ অন্য কাগজ আটকে রেখেছিল।

শেষ পর্যন্ত বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, তারাই আমায় ফেরার ব্যবস্তা করে।

তারাই ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার ফেরার টিকিট জোগাড় করে দেন। আর হ্যাঁ, এক জনের কতা মনে রাখব ভারতীয় দূতাবাসের এক আধিকারিকের স্ত্রী। তিনি ফেরার সময় আমার হাতে কিছু টাকাও তুলে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন