রানাঘাট কাণ্ডের পরে ফের সামনে এল অনুপ্রবেশ প্রশ্ন

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথ ভাবে পদক্ষেপ করা জরুরি বলে মনে করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সম্প্রতি রানাঘাট কাণ্ডেও বেশির ভাগ অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক। শনিবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানের শেষে এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথ ভাবে পদক্ষেপ করা জরুরি বলে মনে করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

Advertisement

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সম্প্রতি রানাঘাট কাণ্ডেও বেশির ভাগ অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক। শনিবার কলকাতায় এক অনুষ্ঠানের শেষে এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যকে যৌথ ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।”

এ দিন কলকাতায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহও। বস্তুত, এ রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজেপি গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই সরব। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিপদ কী হতে পারে, রানাঘাট তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলে মন্তব্য করেন সিদ্ধার্থনাথ। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশিরা এ রাজ্য দিয়ে ঢুকে অসম-সহ অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। তার ফলে সেখানেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। রাজ্যপালের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সিদ্ধার্থনাথ এ দিন বলেন, “অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কেন্দ্র প্রস্তুত। রাজ্য সহযোগিতা করলে তা সম্ভব।”

Advertisement

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা অবশ্য অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব কেন্দ্রের বলেই দাবি করেছেন। তাঁরা বলছেন, সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব বিএসএফের। সীমান্তের বাধা এড়িয়ে কী ভাবে বাংলাদেশিরা এ রাজ্যে ঢুকছে, তা বিএসএফ-কেই দেখতে হবে। বিএসএফ অনুপ্রবেশকারী ধরে দিলে রাজ্য পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে ৭০ হাজার বিএসএফ জওয়ান রয়েছে। আমাদের গোটা রাজ্যে এত পুলিশ নেই।” তা হলে কি পুলিশের কিছু করার নেই? স্বরাষ্ট্র দফতরের ওই কর্তা জানান, বিএসএফের পাশাপাশি পুলিশও অনুপ্রবেশকারী পাকড়াও করে। রাজ্যের সব জেলের মোট বন্দির ১৫ শতাংশই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে নিয়মিত বৈঠকও হয়।

বিএসএফ অবশ্য রাজ্যের অভিযোগ মানতে চায়নি। এক বিএসএফ কর্তা বলেন, “আমরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু কেবল বিএসএফ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবে না। এ ব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্রকে যৌথ ভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর এবং বিএসএফের কর্তারা অপরাধীদের সীমান্ত পারাপার ঠেকানো নিয়ে নানা দাবি করলেও রানাঘাট কাণ্ডের অপরাধীদের বেশির ভাগই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঠাঁই নিয়েছে বলে সিআইডি-র দাবি। ওই অপরাধীদের ধরতে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে শনিবার সিআইডি-র এক কর্তা জানিয়েছেন। ১৩ মার্চ রাতে রানাঘাটের একটি কনভেন্ট স্কুলে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতী। ডাকাতির পাশাপাশি এক বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণও করে দুষ্কৃতীরা। সেই মামলায় বুধবার রাতে মুম্বই থেকে মহম্মদ সালিম শেখ ও হাবরা থেকে গোপাল সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও এখনও লুঠ করা টাকার সন্ধান পাননি তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য, “ওই দু’জন লুঠ করা টাকার ভাগ পায়নি বলেই দাবি করছে।”

সিআইডি সূত্রের খবর, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা তাদের পাণ্ডা মিলন সরকারের নেতৃত্বে সীমান্ত পেরিয়ে হাবরায় গোপালের বাড়িতে ডেরা বেঁধেছিল। মিলন গোপালের আত্মীয়। গোপালের ভাইঝির বিয়ে উপলক্ষে ১০ মার্চ এ দেশে ঢুকেছিল তারা। সেখানে বসেই রানাঘাটে ডাকাতির ছক কষেছিল দুষ্কৃতীরা। সালিমকে জেরা করে সিআইডি জেনেছে, গোপালই তাদের রানাঘাটে নিয়ে গিয়ে এলাকা চিনিয়েছিল। যদিও গোপাল জেরায় এ সব তথ্য অস্বীকার করেছে। এ বার তাদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে বলে সিআইডি সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন