বাড়িতে এল বস্তায় মোড়া দেহের খবর

প্রতিবেশী সঞ্জীব বসু বলেন, “পাড়ার সকলেই এক কথায় বলবে, ওর মতো ছেলে হয় না।” তিনি বলেন, “আমরা চাই, খুনিকে গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দেওয়া হোক।”       

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

রানাঘাট শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩২
Share:

শোকার্ত পরিজন। নিজস্ব চিত্র

কাজ থেকে ফিরে বাড়িতে, বিশেষ করে দিদির সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন পার্থ। বুধবারের পর থেকে সেই ফোন আর আসেনি। উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তায় কাঁটা হয়ে ছিলেন বাড়ির লোক। তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি হল। বুধবার রাত আটটা নাগাদ চাকদহের বাড়িতে এল পার্থ-র মৃত্যুসংবাদ। তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

Advertisement

দেহ আপাতত রাখা হয়েছে ডোমজুড় থানায়। খবর পাওয়া পরে পার্থর বাবা-সহ কয়েক জন সেখানে পৌঁছোন। মৃতদেহটি এতটাই বিকৃত ছিল যে মুখ দেখে চেনার উপায় ছিল না। দেহের গঠন এবং অন্তর্বাস দেখে দেহ চিহ্নিত করেন পরিবারের লোকেরা। চাকদহ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরপাড়া এলাকায় বাড়ি বছর পঁচিশ পার্থ চক্রবর্তীর। তাঁরা এক ভাই এবং এক বোন। পার্থ ছিলেন ছোট। তাঁর দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা পঙ্কজ চক্রবর্তী ভারতীয় জীবন বিমার এজেন্ট। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর পার্থ কাজ পেয়ে যান একটি মাইক্রোফিন্যান্স সংস্থায়। তিনি ছিলেন ডোর ব্যাঙ্কিং অফিসার। কর্মসূত্রে ছিলেন হাওড়ার ডোমজুড়ে। প্রতি শনিবার রাতে অফিস থেকে সোজা নদিয়ার বাড়ি ফিরতেন আবার সোমবার সেখান থেকে হাওড়া যেতেন। গত সোমবারও তিনি একই ভাবে বাড়ি থেকে হাওড়া গিয়েছিলেন। খুব কাজের চাপ না-থাকলে প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে তিনি বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। বুধবার সকাল আটটা নাগাদ পার্থ তাঁর দিদি গায়ত্রী রায়কে ফোন করেছিলেন। গায়ত্রীদেবী বলেন, “ভাই বলেছিল, কাজে যাচ্ছিল। রাতে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে কথা বলবে। কিন্তু আর কথা হয়নি। আর কোনও দিন ভাইয়ের সঙ্গে কথা হবে না।”

বৃহস্পতিবার বিকালে তাঁদের চাকদহের বাড়িতে ছিল আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের ভিড়। মা মনিকা চক্রবর্তী কাঁদতে-কাঁদতে অজ্ঞানের মতো হয়ে যাচ্ছেন। জ্যেঠতুতো দাদা পেশায় কলেজ শিক্ষক শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, “বুধবার সকালে দিদির পাশপাশি বাবার সঙ্গেও কথা বলেছিল পার্থ। বাবা কেমন আছে, কোথায় রয়েছে, সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে। রাতে আবার কথা বলবে বলে কথা শেষ করেছিল।” তিনি বলেন, “প্রমাণ লোপাটের জন্য নৃশংস ভাবে ওকে খুন করা হয়েছে। ভাইয়ের এইরকম কোনও ভয়ঙ্কর শত্রু আছে বলে আমাদের জানা নেই। ও কোনওদিন এ ব্যাপারে আমাদের কাউকে কখনও কিছু বলেনি। খুন হওয়ার পর এখন বিভিন্ন ধরনের কথা শুনতে পাচ্ছি। কোনও মেয়ের সঙ্গে ওর কোনও সম্পর্ক ছিল বলে আমাদের জানা নেই। এমনকি তার বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে বারবার বলত, বাবা-মায়ের পছন্দ করা পাত্রীকেই মেনে নেবে।”

Advertisement

এলাকায় ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিলেন পার্থ। প্রতিবেশী সঞ্জীব বসু বলেন, “পাড়ার সকলেই এক কথায় বলবে, ওর মতো ছেলে হয় না।” তিনি বলেন, “আমরা চাই, খুনিকে গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দেওয়া হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন