কর্তায় অনাস্থা কি ঐতিহ্য বিসিকেভি-র

এক সময়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব র‌্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কের প্রকাশিত তালিকায় রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেরা ছিল বিসিকেভি। নিকট অতীতেও তারা দেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সেরার তকমা পায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই কোনও স্থায়ী উপাচার্য ছিলেন না। অস্থায়ী উপাচার্যেরাও বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের জেরে আচমকা পদ ছাড়তে বাধ্য হন। 

Advertisement

মনিরুল শেখ

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩১
Share:

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।—ফাইল চিত্র

গোড়াপত্তনটা হয়েছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু মূলত পেশাগত কৃষিবিজ্ঞানের পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্য বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদের ঠিক বনছিল না। ১৯৭৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় আইন করে তৈরি হল স্বতন্ত্র বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। দিনে দিনে তার ডালপালা ছড়িয়েছে। প্রথমে শুধু কৃষি দিয়ে শুরু হলেও পরে যোগ হয়েছে উদ্যানপালন ও এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ।

Advertisement

এক সময়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব র‌্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কের প্রকাশিত তালিকায় রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেরা ছিল বিসিকেভি। নিকট অতীতেও তারা দেশের সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সেরার তকমা পায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই কোনও স্থায়ী উপাচার্য ছিলেন না। অস্থায়ী উপাচার্যেরাও বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের জেরে আচমকা পদ ছাড়তে বাধ্য হন।

বর্তমান উপাচার্য ধরণীধর পাত্র দায়িত্ব নেওয়ার আগে সপ্তাহ দুয়েকের জন্য অস্থায়ী উপাচার্য ছিলেন মানসমোহন অধিকারী। তার আগে বছরখানেকের জন্য দায়িত্ব সামলান অসিত চক্রবর্তী। তাঁরও আগে চিত্তরঞ্জন কোলে প্রায় আড়াই বছরের জন্য পদে ছিলেন। চাপে পড়ে তাঁকে সরতে হয়। একই ভাবে সরোজ সান্যাল এবং রঞ্জিত সামন্তকেও অভ্যন্তরীণ চাপেই পদ থেকে সরতে হয়েছিল। ওই সময়ে এক উপাচার্যের মুখে মুড়ি ছুড়ে মারার ঘটনাও শোনা যায়। এমনকি এক উপাচার্যকে তাঁর কার্যালয় থেকে নিজের বিভাগ পর্যন্ত হাঁটানোও হয়েছিল।

Advertisement

এই অস্থির অবস্থার ইতি ঘটাতে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১৪ (সংশোধিত) অনুযায়ী ‘সার্চ কমিটি’ করে ২০১৬ সালের ১০ জুন ধরণীধরকে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তখন লখনউয়ে এক কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে ছিলেন তিনি। ধরণীধর এসে পাকাপাকি উপাচার্যের পদে বসায় শীর্ষপদে অস্থিরতা থামল বটে, সকলের সেটা ভাল লাগল কি? নাকি কেউ-কেউ তখনই পিছন থেকে কলকাঠি নাড়তে শুরু করেছিলেন? কিছু দিনের মধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তনী ধরণীধর স্বক্ষেত্রে যত পণ্ডিত হোন না কেন, প্রশাসক হিসেবে তিনি ঠিক সামাল দিতে পারছেন না। নবান্ন তাঁর কাজে বিশেষ খুশি নয়। আবার তাঁর আশপাশে এমন কিছু পদাসীন মুখকে দেখা যাচ্ছে, শাসক দলের প্রতি যাঁদের আনুগত্য সুবিদিত। যাঁরা নানা কারণে ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশের চক্ষুশূল।

বিসিকেভি-র ইতিহাস বলছে, অতীতে বহু ক্ষেত্রেই ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীরা একযোগে সর্বময় কর্তার উপরে চাপ সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ ব্যক্তিগত রাজনীতি যাঁর যা-ই থাকুক না কেন, প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে একযোগে নামার প্রবণতা তাঁদের আছে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি। বিশেষ করে ১২ সেপ্টেম্বর রাতে মোহনপুর ক্যাম্পাসে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের হামলার পরের দিনই সব শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। উপাচার্যের নিন্দা করে একযোগে লিফলেট দিয়েছে ওয়েবকুটা এবং ওয়েবকুপা-সহ পাঁচ শিক্ষক সংগঠন।

তবে এই সঙ্কটের মূলে যেতে হলে বিসিকেভি-তে ছাত্র আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করাটা বেশি জরুরি। কেননা সরকারে থাকা দলের প্রতি আনুগত্যের বদলে বেশির ভাগ সময়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনীতিতেই আস্থা দেখিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। যে কারণে শাসকের রোষেও পড়তে হয়েছে। না হলে কেন বহিরাগত হামলায় জড়িয়ে যাবে তৃণমূলের নাম, কেনই বা হরিণঘাটা শহর তৃণমূলের এক নেতাকে গ্রেফতার করার দাবিতে অনড় হবেন ছাত্রছাত্রীরা?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন