আমাদের স্কুল-যাত্রা যেন স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি

বাড়ি থেকে স্কুল— প্রায় আড়াই ঘণ্টার পথটা সহজ করে বললাম বটে তবে এর একটা ভিডিও তোলা থাকলে বুঝতেন একে অনায়াসে ‘আমার স্কুল-যাত্রা’ নামে স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটা ছবি বলা যায়।

Advertisement

ফরিদা বিবি

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:০৬
Share:

স্কুল যাত্রা আমাদের কাছে নিত্যকার এক লড়াই।

Advertisement

গরমে যখন পদ্মা শুকিয়ে যায়, তখন তপ্ত বালির উপর দিয়ে প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে সাইকেল ঠেলে ধূ ধূ চর পেরিয়ে নির্মলচরে পৌঁছতে হয়। তার পর চরের মেঠো রাস্তা ধরে গ্রামের ভেতরে ফের সাইকেল ঠেঙিয়ে এবড়োখেবড়ে পথে অন্তত মিনিট পনেরোর যাত্রা।

বাড়ি থেকে স্কুল— প্রায় আড়াই ঘণ্টার পথটা সহজ করে বললাম বটে তবে এর একটা ভিডিও তোলা থাকলে বুঝতেন একে অনায়াসে ‘আমার স্কুল-যাত্রা’ নামে স্বল্প দৈর্ঘ্যের একটা ছবি বলা যায়।

Advertisement

এর পরেও শুনতে হয়, মেয়েদের দীর্ঘ পথ ঠেঙানো নিছক অজুহাত, স্ত্রী রোগ তো হতেই নেই!

খড়িবোনা পঞ্চায়েত এলাকার গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাইকেল চালিয়ে শিবনগর ঘাটের কাছে আসতে সময় লাগে পাক্কা ৩০ মিনিট। কিন্তু বর্ষাকালে ওই পথটা যেন আরও দীর্ঘ হয়ে ওঠে। তখন প্রতি পদে দুর্ভোগ, থাকে প্রাণের ঝুঁকিও।

নির্মলচর নৌকা করে নদী পার হওয়ার সময়ে আচমকা ঝড় উঠলে পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠে। নৌকা তখন বেসামাল হয়ে পড়ে। সেই সময়ে যে কোনও সময়ে নৌকাডুবির সম্ভাবনা থাকে। বাড়িতে ফেলে আসা তিন ছেলেমেয়ের কথা ভেবে কান্না পায় এক এক সময়ে।

বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলে পৌঁছনোর এই আড়াই ঘণ্টার যাত্রাপথে কোথাও কোনও শৌচালয় নেই। সে যে কি ভয়ঙ্কর অসুবিধা পুরুষ মানুষ বুঝবেন না। স্কুলে শৌচাগার আছে বটে, তবে তা না থাকলেই বোধহয় ভাল হত। যেন রোগের আঁতুরঘর। আসলে ওই শৌচালয়গুলিই রোগের উৎসস্থল। এ ধকল আর নিতে পারছি না। তার পরেও শুনতে হয়, মহিলা শিক্ষকদের অসুস্থতা নিয়ে বক্রোক্তি।

আসলে স্কুল-কলেজের বহু শিক্ষিকার এই জীবন-যন্ত্রণার কথা শিক্ষামন্ত্রীর জানার কথা নয়। কলকাতা শহরে বসে তিনি আমাদের মত শিক্ষিকাদের সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন, তা না করাটাই অস্বাভাবিক। অনুরোধ করব, একবার গাঁ-গঞ্জে ঘুরুন। দু-একবার আমাদের মতো যাত্রাপথ ভেঙে স্কুলে যান, তার পরে ওই মন্তব্য করবেন! আর তা যদি না পারেন, তা হলে অন্তত আমাদের মতো শিক্ষিকাদের নিয়ে অনাবশ্যক আশঙ্কায় ভুগবেন না!

শিক্ষিকা, চর কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন