জলঙ্গির পাড় থেকে এ ভাবেই চুরি হয়ে যাচ্ছে মাটি। ধুবুলিয়ার মায়াকোলে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য।
কাকভোরে ঘুমিয়ে আছে তিরতিরে জলঙ্গি। চরাচর জুড়ে জমাট কুয়াশা। নিঃশব্দে পাড়ে এসে দাঁড়ায় একটি নৌকা।
চারপাশের স্তব্ধতা ভেঙে নদীর পাড় বরাবর একের পর এক কোদালের কোপ। শ্রমিকদের মৃদু কথাবার্তা, বিড়ির ধোঁয়া, মোবাইলের কর্কশ রিংটোনে ককিয়ে ওঠে শান্ত নদী, স্নিগ্ধ ভোর। ঝপাঝপ শব্দে ঘুম ভাঙে নদী লাগোয়া জনপদের। মাটি মাফিয়াদের সৌজন্যে চোখের সামনে নদী-লুঠ দেখতে দেখতে দিন শুরু হয় ঘূর্ণি, মায়াকোলের।
আর ইসলামপুরের ভৈরবের ছবিটা কেমন?
সেখানে আবার কোদাল-টোদাল নয়, শীর্ণ নদীতে নেমে পড়ে জেসিবি ও বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর। ভোরের আলো ফোটার আগে মাটিবোঝাই সেই ট্রাক্টর মিলিয়ে যায় দূরের গ্রামে। বছরের পর বছর ধরে এটাই যেন শীত-নামচা।
যে দৃশ্য গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে নদীপাড়ের জনপদের। বিষয়টি অজানা নয় প্রশাসনেরও। অথচ মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা তো দূরের কথা, দিনের পর দিন তাদের দৌরাত্ম্য যেন বেড়েই চলেছে। প্রকাশ্যে বুক ঠুকে তারাও বলছে, ‘‘নদী কারও বাপের নয়, দাপের। সেখান থেকে মাটি তুলতে আবার অনুমতি লাগে নাকি? ক্ষমতা থাকলে পুলিশ গাড়ি আটকে দেখাক!’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওদের বাধা দেবে সাধ্য কার! প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টে খুনের হুমকি শুনতে হয়। ঘূর্ণির এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘দু’একবার আমরাও বাধা দিতে গিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। উল্টে আমাদেরই নানা ভাবে বিপদে পড়তে হয়েছে। মাটি কারবারিদের সঙ্গে ইটভাটা মালিক ও প্রশাসনের যা দহরম মহরম, তাতে ওদের বিরুদ্ধে কে কী ব্যবস্থা নেবে!’’
অতএব, অবাধে মাটি লুঠ চলছেই। নদী পাড়ের মাটি নৌকা কিংবা ট্রাক্টর বোঝাই হয়ে চলে যাচ্ছে ইটভাটা ও মাটি ব্যবসায়ীদের জিম্মায়। তেহট্টের রানিনগরেও চর জেগেছে জলঙ্গিতে। সেখান থেকেও চলছে মাটি কাটা।
প্রশাসন কি তাহলে সত্যিই শীতঘুম দিচ্ছে? দুই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, বেআইনি ভাবে মাটি কাটা রুখতে তাঁরা প্রায়ই অভিযান চালান। গাড়ি আটক, ধরপাকড় সবই চলে। যদিও নদী পাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘সে তো সবই লোক দেখানো। কখনও কোনও অভিযোগ জমা পড়লে প্রশাসন সক্রিয় হয়ে ওঠে। মাঝে কিছু দিন মাটি কাটা বন্ধ থাকে। তারপর ফের যে কে সেই।’’
নদী মরুক, খেত চুলোয় যাক। এখন মাটিতেই টাকা ঢালছে মাফিয়ারা।
(চলবে)