তালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া বিবেকানন্দ কলেজ, নদিয়ার চাপড়া বাঙালঝি কলেজ, মেদিনীপুর কমার্স কলেজের পরে এ বার ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনের চাপে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অসীম মণ্ডল পদত্যাগ করতে চাইলেন।
এ বছরের গোড়া থেকে এই কলেজের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কারণে দফায় দফায় এসএফআই, টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদের আন্দোলনের মুখে পড়েন অসীমাবাবু। সম্প্রতি তিনি কলেজ পরিচালন সমিতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। অসীমবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “শারীরিক অসুস্থতার কারণেই এই সিদ্ধান্ত।” কিন্তু কলেজ পরিচালন সমিতির কয়েকজন সদস্য থেকে শুরু করে শিক্ষকদের একাংশ, কলেজের সাধারণ ছাত্রছাত্রী এবং অন্য কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষ মনে করছেন, ছাত্র ভর্তি নিয়ে ক্রমাগত অশান্তির চাপে কার্যত বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করতে চেয়েছেন অসীমবাবু। সোমবারও টিএমসিপি প্রায় ঘণ্টাখানেক তাঁকে ঘেরাও করে রাখে। যদিও টিএমসিপি এবং এসএফআইয়ের দাবি, অসীমবাবুর সঙ্গে এমন কোনও আচরণ করা হয়নি, যার জন্য তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।
তবে পরিচালন সমিতির সদস্য তথা কলেজেরই শিক্ষক প্রীতিময় মজুমদার জানান, ছাত্র সংগঠনগুলির চাপেই গত বছর নির্দিষ্ট আসনের তুলনায় অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করা হয়। তার পরে কলেজের দায়িত্ব নেন অসীমবাবু। অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তির জন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কড়া সমালোচনা সহ্য করে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৮৪ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। তার পরেও কলেজে ভর্তি নিয়ে অশান্তি অব্যাহত।
সব ছাত্র সংগঠনই কোনও না কোনও সময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ৯ জুন এসএফআই এবং টিএমসিপি অসীমবাবুকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। পরের দিনই টানা ৫ ঘণ্টা ঘেরাও বিক্ষোভ করে টিএমসিপি। তারাই আবার ঘেরাও করে ১১ জুন। ১৮ জুন ছাত্র পরিষদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তালাবন্দি করে রাখে বেশ কয়েক ঘণ্টা। ৩০ জুন কলেজ চত্বরে তিন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জন আহত হন। সম্প্রতি ২৬ অগস্ট এসএফআই ফের অসীমবাবুকে তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখায়। সোমবার টিএমসিপি আবার ঘেরাও করে অসীমবাবুকে। প্রীতিময়বাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতেই অসীমবাবু পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলামও বলেন, “ছাত্র রাজনীতির নামে অসভ্যতা আর সহ্য করতে পারছেন না বলেই সরে যেতে চাইছেন অসীমবাবু।” কাছাকাছি এলাকার সাগরদিঘি কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধেশ্বর পাহাড়িও বলেন, “এখন যা অবস্থা, তাতে ছেড়ে দিতে পারলে সবাই বেঁচে যায়।” পরিচালন সমিতির সভাপতি ভজন সরকারেরও মত, অসীমবাবু ভাল ও সৎ মানুষ। তাঁর আমলে নির্বিঘ্নে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, অনলাইনে ভর্তি চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশিকা মেনেই ছাত্র ভর্তিও হয়েছে। তিনি বলেন, “তারপরেও কলেজে বিক্ষোভ চলছে। তাতেই বিরক্ত হয়ে অসীমবাবুর এমন সিদ্ধান্ত নিলেন বলেই মনে হচ্ছে।”
তবে এসএফআইয়ের রঘুনাথগঞ্জ জোনাল সম্পাদক দেবাশিস রায় জানান, ছাত্র আন্দোলনের চাপে অসীমবাবু পদত্যাগ করতে চান, এটা তাঁরা মানতে পারছেন না। তিনি বলেন, “কী এমন ঘটেছে কলেজে যে, ইস্তফা দিতে হবে? গত মঙ্গলবার তাঁর ঘরে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ ছিল নেহাতই আমাদের প্রতীকী আন্দোলন।” টিএমসিপি-র কলেজ সংগঠনের আহ্বায়ক খাইরুল আলমেরও দাবি, এমন কিছু ঘটেনি যে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ইস্তফা দিতে হবে। ছাত্র পরিষদের জঙ্গিপুর শহর সভাপতি সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য বক্তব্য, “ছাত্র ভর্তি নিয়ে এসএফআই এবং টিএমসিপি-র আন্দোলনের চাপেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন অসীমবাবু।”