জঙ্গিপুর

মিলছে না ভাতা, সঙ্কটে ১৪০টি শিশু শ্রমিক স্কুল

আর্থিক সঙ্কটের জেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে জঙ্গিপুর মহকুমার শিশু শ্রমিকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ১৪০টি প্রাথমিক স্কুল। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত — ৪৫ মাস ধরে ওই সব স্কুলের পড়ুয়ারা প্রাপ্য মাসিক বৃত্তির পায়নি। শিক্ষক-শিক্ষিকারও গত ২৮ মাস ধরে কোনও সাম্মানিক পাচ্ছেন না। ১৮ মাস ধরে সাম্মানিক পাননি কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পের ফিল্ড অফিসাররা। তাই নিয়ে কেন্দ্রের (পড়ুন বিজেপি) সঙ্গে জেলা প্রশাসনের শুরু হয়েছে চাপানউতোর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৬
Share:

আর্থিক সঙ্কটের জেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে জঙ্গিপুর মহকুমার শিশু শ্রমিকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ১৪০টি প্রাথমিক স্কুল। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত — ৪৫ মাস ধরে ওই সব স্কুলের পড়ুয়ারা প্রাপ্য মাসিক বৃত্তির পায়নি। শিক্ষক-শিক্ষিকারও গত ২৮ মাস ধরে কোনও সাম্মানিক পাচ্ছেন না। ১৮ মাস ধরে সাম্মানিক পাননি কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পের ফিল্ড অফিসাররা। তাই নিয়ে কেন্দ্রের (পড়ুন বিজেপি) সঙ্গে জেলা প্রশাসনের শুরু হয়েছে চাপানউতোর।

Advertisement

বিজেপি-র মুর্শিদাবাদ জেলা সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মণ্ডল বলেন, “পড়ুয়াদের মাসিক ১৫০ টাকা করে বৃত্তি পাওয়ার কথা। কেন্দ্র থেকে সেই মতো ২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮ মাসের বৃত্তি বাবদ ১ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা অন্য খাতে খরচ করায় কেন্দ্রকে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। তার ফলে পরবর্তী আর্থিক বরাদ্দ আটকে আছে।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। তিনি বলেন, “ওই টাকা খরচে কোনও অনিয়ম হয়নি। অডিট রিপোর্ট ও ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে। আসলে শিশু শ্রমিকদের লেখাপড়া সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পায়নি সারা দেশের এ রকম সব স্কুলই। দ্রুত টাকা পাওয়ার জন্য জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিত্‌ মুখোপাধ্যায়কেও তত্‌পর হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।”

শিশু শ্রমিকদের স্কুলমুখি করার জন্য এনসিপিএল, অর্থাত্‌ ন্যাশানাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্টের অধীন ২০০০ সালে কেন্দ্র একটি প্রকল্প হাতে নেয়। বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত জঙ্গিপুর মহকুমায় ওই প্রকল্পে এখন রয়েছে মোট ১৪০টি স্কুল। ওই ১৪০টি স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বিড়ি শ্রমিক পরিবারের মোট খুদে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। তাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য রয়েছেন ৩৯০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের মাসিক সাম্মানিক চার হাজার টাকা। ১৪০টি স্কুলের তদারকির জন্য রয়েছেন মাসিক ৮ হাজার টাকা ভাতায় ২ জন ফিল্ড ওর্য়াকার। ৭ হাজার খুদে পড়ুয়াদের কেন্দ্র থেকে বিনা পয়সায় বই ও পোশাক সরবরাহ করা হয়। খোদ জেলাশাসক নিজেই বলেন, “খুদে পড়ুয়াদের বৃত্তি ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভাতা ছাড়াও পাঠ্য পুস্তক বাবদও টাকা বকেয়া রয়েছে। কেন্দ্র টাকা না পাঠানোয় ওই সঙ্কট দেখা দিয়েছে।”

Advertisement

ভারতীয় মজদুর সমিতি (বিমএস)-র মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি দিলীপকুমার ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “খুদে পড়ুয়াদের জন্য ২০১১ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ১৮ মাসের বৃত্তি বাবদ পাওয়া ১ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা সঠিক ভাবে খরচ না হওয়ায় মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রকে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তার পরিণতিতেই পরবর্তী সময় টাকা বরাদ্দ হয়নি বলে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক থেকে আমরা জেনেছি।’’ তাঁর হুমকি, ‘‘মাস খানেকের মধ্যে যদি বৃত্তির টাকা বিলি করা না হয় তা হলে ৭০০০ খুদে পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে জেলাশাসকের বাংলোর সামনে ধর্নায় বসব।” এনসিপিএল- এর অধীনে থাকা জঙ্গিপুর মহকুমার স্কুলগুলির দেখভাল করেন জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) এনাউর রহমান। তিনি বলেন, “এনসিপিএলের অধীনে শিশু শ্রমিকদের লেখাপড়া শেখানোর ওই প্রকল্পের আর্থিক বেহাল দশা কেবল মুর্শিদাবাদেই নয়। একই অবস্থা দেশের প্রায় সব রাজ্যের। গত ২৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি ডিকে হিমাংশু সব রাজ্যের সঙ্গে এ নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেন। আমরাও ছিলাম সেই কনফারেন্সে। তারপর বকেয়া বরাদ্দ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য শ্রম মন্ত্রক থেকে ছাড়পত্র- সহ অর্থ মন্ত্রকে প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পর অর্থ বরাদ্দ হলেই সমস্যার সমাধান হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন