অকাল ধসে বিপন্ন কামালপুর

দিন কয়েক আগেও ছিল পরিপূর্ণ সংসার— মাচায় ফলন্ত লাউ, উঠোন জুড়ে মুরগির দাপাদাপি। গঙ্গার অকাল ধসে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে সেই কামালপুর। শীতের সকালে, চেনা ঘর, পরিচিত দাওয়া ছেড়ে কামালপুরের মানুষ তাই অদূরের আমবাগানে ছিন্নমূল সংসার পেতেছেন।

Advertisement

বিমান হাজরা

সুতি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:০৩
Share:

গঙ্গা গিলেছে ঘর। আশ্রয় গাছের তলায়।

দিন কয়েক আগেও ছিল পরিপূর্ণ সংসার— মাচায় ফলন্ত লাউ, উঠোন জুড়ে মুরগির দাপাদাপি। গঙ্গার অকাল ধসে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে সেই কামালপুর।

Advertisement

শীতের সকালে, চেনা ঘর, পরিচিত দাওয়া ছেড়ে কামালপুরের মানুষ তাই অদূরের আমবাগানে ছিন্নমূল সংসার পেতেছেন। আর, ঘর-হারা চোখে দেখছেন, নদী গর্ভে একে একে হারিয়ে যাওয়া তাঁদের চেনা ভিটে, উঠোন।

শীতের গঙ্গা সরে গিয়েছে বেশ কিছুটা দূরে। জলও খানিক কম। তবু, এই পৌষের শীতে যেন শ্রাবণের পাড়-ভাঙার ছায়া পড়েছে ওই গ্রামে। গত সাত দিনে নদী ঘেঁষা অন্তত সাতটি বাড়ি পড়ে গিয়েছে। নদীর ধার ঘেঁষা বাড়িগুলি পাতা খসার মতো পড়ে যাচ্ছে কেন?

Advertisement

সেচ কর্তারা অন্ধকারে। তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলছেন, এ ঘটনা মুর্শিদাবাদ-মালদহে নতুন নয়। তাঁর ব্যাখ্যা— শীতে, নদী তার জলস্তর নিয়ে সব থেকে নীচে অস্থান করে ঠিকই কিন্তু সেই সময়ে ভূগর্ভস্থ জলের একটা ধারা নিরন্তর বয়ে চলে নদীর দিকে। তিনি বলছেন, ‘‘ওই চলাচলের সময়ে ভূগর্ভস্থ জল মাটির নীচে যে বালুস্তর থাকে তাকেও টেনে নিয়ে যায় নদীর দিকে। উপরের ভারী মাটির স্তরের নীচটা পাঁকা হয়ে য়াওয়ায় ঝুপ করে খসে পড়ে।’’ এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলেই তাঁর অনুমান। তবে তিনি আশ্বস্থ করছেন, একটা নির্দিষ্ট অংশের পরে নদী কিন্তু আর এগোবে না। রঘুনাথগঞ্জ সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়অবশ্য মনে করছেন, ‘‘এটা নদী ভাঙন নয়। স্পারে ধস নেমেই এই বিপত্তি ঘটেছে।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধধ্যেই গোটা সাতেক বাড়ি ধসে গিয়েছে। অপেক্ষায় আরও অন্তত ত্রিশটি। ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় অনেকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন। এ দিকে, সামশেরগঞ্জের কামালপুরের ওই আকস্মিক ভাঙন রোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেয়নি সেচ দফতর।

এ ভাবেই ধসে যাচ্ছে ঘরবাড়ি।

জিনিসপত্র সরিয়ে পাশেই বাগানে ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাবলু শেখ, জিয়াউল শেখ ও মনিরুল শেখেরা। জিয়াউল বলেন, ‘‘শীতের সময় নদীর জল নীচে নেমে গিয়েছে। ভেবেছিলাম এ বছর বেঁচে গেলাম। কিন্তু হঠাৎই স্পারে ফাটল দেখে তড়িঘড়ি সব সরাতে শুরু করি। চোখের সামনে বাড়িটা পড়ে গেল।’’ বহুদিনের ভিটে থেকে সরে যাচ্ছেন আলেমা বেওয়া। তিনি বলেন, ‘‘বিডিও এসেছিলেন অবস্থা দেখতে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু ওইটুকুই।’’

তুলি বিবি বলেন, ‘‘যে ভাবে ভাঙন চলছে তাতে আশপাশের কোনও বাড়িই থাকবে না। ভয়ে তাই একে একে সকলেই সরে যেতে শুরু করেছেন। এরপর কোথায় যাব চিন্তা সেটাই।’’

তৃণমূলের সামশেরগঞ্জের পর্যবেক্ষক মন্টু বিশ্বাস জানান, অকাল ভাঙনে অন্তত ৭০টি পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে সাহায্য পেলেও ভাঙন রোধে কোনও ব্যবস্থা না নিতে পারলে ওই গ্রামে সঙ্কট আরও বাড়বে।

বিডিও পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি না কেন হঠাৎ ভাঙন শুরু হল। প্রশাসনিক পর্যায়ে রিপোর্ট পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ সেচ দফতরের সহকারি বাস্তুকারও এলাকা দেখে গিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। বিপজ্জনক ধস এলাকা থেকে সমস্ত পরিবারকে সরে যেতে বলা হয়েছে।’’

ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন