ডেঙ্গি-পাঠ: গ্রামবাসীদের বোঝাচ্ছেন কন্যাশ্রীরা। নিজস্ব চিত্র
ইতিমধ্যে তারা বেশ কয়েক জন নাবালিকার বিয়ে রুখে দিয়েছে। নিয়মিত খোঁজ রাখছে, এলাকায় কোন নাবালিকার বিয়ের তোড়জোর শুরু হয়েছে। সেই মতো তারা যোগাযোগ রাখছে প্রশাসনের সঙ্গেও। এ বার এলাকায় ডেঙ্গি-আতঙ্ক রুখতে ও ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেও ভরসা সেই কন্যাশ্রীরা।
জয়কৃষ্ণপুরে সামাউন শেখের বাড়ি থেকে বেরোতেই তাদের নজরে এল প্রচুর নারকেলের খোলা। তাতে জমে রয়েছে বৃষ্টির টলটলে জল। কাছেই গাছ থেকে একটি ডাল ভেঙে একে একে তারা উল্টে ফেলে দিল সেই খোলার জল।
পাশের বাড়ির দেওয়ালে ঝুলছে মোটরবাইকের দু’টি পুরোনো টায়ার। কন্যাশ্রী আজমিরার নজরে পড়তেই টায়ার উল্টে দিল তারা।
গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা গরুর খাবার খাওয়ার পরিত্যক্ত বাঁধানো জায়গাটি বৃষ্টির জলে টইটম্বুর। তা দেখে পাশের বাড়িতেই ঢুকে পড়লেন এক কন্যাশ্রী যোদ্ধা সুমি চৌধুরী।
“বাড়িতে কেরোসিন আছে? একটু দেবেন?” প্রশ্ন শুনে বছর বারোর এক কিশোরী তড়িঘড়ি এগিয়ে দিল একটি শিশি। সুমি সেই কেরোসিন ওই জায়গায় ঢেলে দিয়ে বললেন, “জমা জল মানেই বিপদ। জমা জল থাকলেই তা ফেলে দিন। না হলে জলে ঢেলে দিন কেরোসিন।”
সম্প্রতি আগুনের গতিতে ডেঙ্গি আতঙ্ক ছড়িয়েছে ধুলিয়ানে। সেই আতঙ্ক কাটাতে ও ডেঙ্গি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করতে পথে নেমেছে কন্যাশ্রী যোদ্ধারা। আজমিরা, সুমির সঙ্গে মাঠে নেমেছেন কলেজ পড়ুয়া উর্মিলা, খালেদারা। জয়কৃষ্ণপুর, আলমশাহি, চাচন্ড, ঘোষপাড়া এলাকায় ডেঙ্গির বিরুদ্ধে সচেতনতা অভিযান চালান তাঁরা। পাশাপাশি মসজিদগুলি থেকে মাইকে সচেতন করছেন ইমামেরাও।
সরকারি হিসেবে সমশেরগঞ্জ ব্লকে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে ১১ জনের রক্তে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরূপম বিশ্বাসের মতে, ‘‘জেলার অন্য ব্লকগুলির চেয়ে সংখ্যাটা কিছুটা বেশি। তাই সমশেরগঞ্জে সচেতনতা গড়তে সকলকে নিয়ে প্রচারের উপরই জোর দিচ্ছি আমরা।’’
শনিবার থেকে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ও ব্লকে দফায় দফায় শুরু হয়েছে বৈঠক। স্বাস্থ্যকর্মী, পঞ্চায়েত কর্তা, মসজিদের ইমাম, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এমনকী কন্যাশ্রীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ব্লক ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
কন্যাশ্রী যোদ্ধা কলেজ পড়ুয়া সুমি চৌধুরী বলছেন, “আমাদের দেখে অনেকে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি দেখে অনেকের মন থেকে আতঙ্ক মুছেছে।’’
কন্যাশ্রী খালেদা খাতুন বলছেন, “স্কুলগুলিতেও ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’’ হাতিছিত্রা মসজিদের ইমাম আব্দুর রহিমের কথায়, “মসজিদে থেকে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হচ্ছে সকলকেই।”