ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দিলোয়ার মল্লিকের বাবা। রবিবার চৌমুহায়। —নিজস্ব চিত্র।
কেরলের বন্যা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে আশঙ্কায় বুক কেঁপেছিল। সেই আশঙ্কাই আতঙ্কের চেহারা নিয়েছে মল্লপুরমে আটকে পড়া শ্রমিক দিলোয়ার হোসেন মল্লিকের মৃত্যুর খবরে।
নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিলোয়ারের মতোই অনেকে শ্রমিকের কাজ নিয়ে কেরলে গিয়েছেন। তাঁদের কী হল, তা জানার জন্য উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে বহু পরিবার।
খবরের কাগজে আর টিভির পর্দায় চোখ রেখে তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছেন কেরলের বন্যা পরিস্থিতি। এর মধ্যে কেউ কেউ কোনও মতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেও অনেকেরই কোনও খবর নেই। দিনের নানা কাজের মধ্যেও মোবাইলের দিকেই নজর তাঁদের বাড়ির লোকেদের। এই বুঝি ফোন এল।
এমনই একজন ধুবুলিয়ার শোনডাঙার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম শেখ। মাস সাতেক আগে তিনি কেরলে গিয়েছেন রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে। আছেন ত্রিশূর এলাকায়। দশ দিন আগে ফোন করেছিলেন বাড়িতে। বলেছিলেন, বন্যা শুরু হয়েছে। মোবাইলে চার্জও ফুরিয়ে এসেছে। তারপর থেকে আর কোনও খবর নেই। বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। উদ্বিগ্ন গোটা পরিবার। রবিউলের জামাইবাবু সলিলউদ্দন শেখ ১০ বছর কেরলে ছিলেন। কেরল তাঁর চেনা। সে জন্যই মোটেই স্বস্তি পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, “এখানে বসেই বুঝতে পারছি যে কতটা বিপদের মধ্যে ও আছে। ফোন না পাওয়া পর্যন্ত কিছুতেই নিশ্চিন্ত হতে পারছি না।”
উদ্বেগের মধ্যে টানা কয়েকদিন কাটানোর পর শনিবার অবশ্য কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নবদ্বীপের তেওরখালি গ্রামের সাবির শেখের বাড়ি। কেরলে লন্ড্রির দোকানে কাজ করেন সাবির। শনিবার ফোন করেন তিনি। তবে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলার পরেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ততক্ষণে অবশ্য জানা গিয়েছে, নিরাপদ জায়গায় ঠাঁই মিলেছে সাবিরের। মৃত দিলোয়ারের গ্রামের বাসিন্দা কালাম মল্লিকের দুই ছেলে জামাল আর মিলনও এখন কেরলে। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তাঁরা। তিন দিন পর রবিবার দুপুরে তাঁদের ফোন এসেছে বাড়িতে।
তবে বাড়ির ছেলের ফোন পেয়েও আশঙ্কা পুরোপুরি কাটছে না। কেরলে আটকে পড়া শ্রমিকদের অনেকেই তিন-চার দিন ধরে খাবার পাননি, মাথার উপরে ঠিক মতো ছাদ নেই। অসুস্থও হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। হরিণঘাটার সাত শিমুলিয়ার বাসিন্দা ইউসুফ মণ্ডল ও নুরউদ্দিন মণ্ডল মাস তিনেক ধরে এর্নাকুলামে। দিন কয়েক আগে তাঁরা একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির তিন তলার উপর কাজ করছিলেন। আচমকা জল ঢুকে যায় সেই বাড়িটিতে। তখন থেকেই সেখানে আটকে তাঁরা।
একই অবস্থা হরিণঘাটার নিমতলার বাসিন্দা সন্দীপ সরকারের। তিনি এক নামী সংস্থার শা়ড়ি বিক্রি করেন। দিন কয়েক আগে তিনি কেরলের একটি হোটেলে গিয়েছিলেন শাড়ি বিক্রি করতে। তিনিও ওই হোটেলে আটকে রয়েছেন। কবে যে হোটেল থেকে বার হতে পারবেন, তা জানেন না সন্দীপ।
সব মিলিয়ে আশা আশঙ্কার দোলাচলে রবিউল, ইউসুফ, সন্দীপদের বাড়ির লোকজন। তাঁদের শুধু একটাই প্রার্থনা, ভালয়-ভালয় ঘরের ছেলে ঘরে ফিরুক।