সব-খেলার-সেরা: ইসলামপুরে মাদ্রাসার মাঠে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
ব্রাজিল নেই। নেই জার্মানিও। খেলা দেখা নিয়ে তাই একটা হালকা দোটানায় ভুগছিলেন করেছে চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ার অতনু সাহা। তবু শেষ মুহূর্তে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে আসার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন তিনি। হোক না জুনিয়র, তবুও
তো বিশ্বকাপ!
সন্ধে থেকে ক্লাবের অন্য সদস্যদের সঙ্গে টিভির সামনে বসে গিয়েছেন তিনি। জগদ্ধাত্রী না হয় পরের দিন দেখা যাবে। এবং খেলার শেষে তিনি দারুণ খুশি— ‘‘এমন টানটান ফাইনাল ক’টা দেখা যায়!’’
জেলাসদর কৃষ্ণনগর বা বহরমপুর ছাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তাপ পৌঁছেছে গাঁ-গঞ্জে। বড়দের বিশ্বকাপের সময়ে যেমন পাড়ায়-পা়ড়ায় ব্রাজিল-আর্জেন্তিনার পতাকা ওড়ে, ক্লাবের দেওয়াল ভরে মেসি-রোনাল্ডো-নেমারের পোস্টারে, ততটা হয়নি। কিন্তু নিতান্ত কিশোর ফুটবল দেখতে লোকে যে ভাবে টিভির সামনে সেঁটে যাচ্ছে, তা-ই বা কম কী!
অনেকে আবার হাত কামড়াচ্ছেন, এত কাছে যুবভারতীতে ফাইনাল হচ্ছে, তবু মাঠে গিয়ে খেলা দেখা হল না। ট্রেনে টেপে বসলেই কয়েক ঘণ্টায় কলকাতা। কিন্তু ক’দিন ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ইন্টারনেটে টিকিট কাটতে পারেননি অনেকে। নেতা-দাদা ধরে টিকিট জোগাড়ের চেষ্টা করে গিয়েছেন অনেকে। সেটাও হয়নি। হতাশ হয়ে ক্লাবে খেলা দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেবাশিস চক্রবর্তী, স্বপন ঘোষেরা। দেবাশিসের আক্ষেপ, “কলকাতায় বিশ্বকাপ ফাইনাল হচ্ছে। অথচ মাঠে গিয়ে দেখতে পারলাম না। কষ্ট তো হচ্ছেই। শেষ মুহূর্তে যদি টিকিট জোগাড় করতে পারি এই আশায় গাড়িও ভাড়া করে রেখেছিলাম!”
তবে সকলে এতটা ফুটবল-পাগল নন। ভারত ছিটকে যাওয়ার পরেই কিছু লোকের প্রাথমিক উন্মাদনা উবে গিয়েছিল। আবার অন্য দু’একটা প্রিয় দলও ফাইনালে উঠতে পারেনি। আম-বাঙালির এমনিতে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা সম্পর্কে বাড়তি দুর্বলতা রয়েছে। জার্মানিরও কিছু অনুরাগী আছে ইতিউতি। ইংল্যান্ডের হাতে গোনা। আর্জেন্টিনা মূল পর্বেই উঠতে পারেনি। জার্মানিকে কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে ব্রাজিল উঠেছিল সেমিফাইনালে। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়েছে। স্পেন আর ইংল্যান্ড নিয়ে অনেকেরই তেমন মাথাব্যথা ছিল না। ডোমকলের সফিকুল ইসলাম বলেন, “ধুর, ব্রাজিলই নেই, কী খেলা দেখব!”
শনিবার বিকেল থেকে কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপে দর্শকের ঢল নেমেছে। তারই মধ্যে কিছু মণ্ডপে বসানো হয়েছিল টিভি। সেখানেই ভিড় করে খেলা দেখেছে জনতা। বিশ্বকাপের সময়ে খদ্দের টানতে ডোমকল আর করিমপুরে বেশ কিছু চায়ের দোকানে টিভি আনা হয়েছিল।
বহরমপুর-কৃষ্ণনগরে আবার কিছু ব্রাজিল সমর্থক টিভির সামনে বসে দেদার সমর্থন করেছেন স্পেনকে। এঁদের এক জন সুগত দত্ত বলেন, “ব্রাজিল যে ভাবে খেলছিল, ভেবেই নিয়েছিলাম যে ওরা চ্যাম্পিয়ন হব। ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হল। তাই চাইছিলাম, স্পেন বদলা নিক।’’
তা হয়তো হল না। কিন্তু সাত-সাতটা গোল আর মুহূর্মুহূ রং বদলানো দুরন্ত গতির ম্যাচে জয়ী হল ফুটবলই।