Jiban Krishna Saha

জীবনের পুকুর ছেঁচার টাকা দেবে কে? সিবিআইয়ের নামে প্রতারণার অভিযোগ তুলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব!

দুই তৃণমূল নেতার দাবি, টাকা দেওয়া তো দূরঅস্ত্‌, বিধায়কের দ্বিতীয় মোবাইল খুঁজে পাওয়ার পর থেকেই আর তাঁদের দিকে ফিরেই তাকাননি সিবিআই আধিকারিকরা। এখন শ্রমিকরা ভিড় করছেন নেতাদের বাড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বড়ঞা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ২২:২৪
Share:

তল্লাশি শেষ হয়েছে। মিলেছে মোবাইল। বিধায়ককেও গ্রেফতার করে নিয়ে চলে গিয়েছে সিবিআই। —ফাইল চিত্র।

যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ— কিছুতেই যেন হিসাব মিলছে না! পাড়ার মুদিখানায় হালখাতা আছে। সেখানে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়েছে জীবনকৃষ্ণ সাহার পুকুর ছেঁচার কাজ করা শ্রমিকদের মজুরি। অগত্যা হাত দিতে হচ্ছে স্ত্রীর জমানো টাকায়। তা দিয়ে কোনও ক্রমে সন্মানরক্ষা। এখনও কয়েক হাজার টাকা বাকি আছে। এমনই অবস্থা মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়কের পুকুর তল্লাশিতে সাহায্য করা তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সাধন প্রামাণিকের। রাগে গজরাতে গজরাতে সাধন বলছেন, ‘‘সিবিআই প্রতারণা করেছে!’’

Advertisement

চার দিন আগে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে এসেছিল সিবিআই। সে সময় নিজের মোবাইল এঁদো পুকুরে ছুড়েছিলেন বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। পুকুর ছেঁচতে সিবিআই সাহায্য চায় স্থানীয় নেতা সাধনের। তিনিও বিধায়কের মোবাইলের খোঁজার কাজে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তল্লাশি শেষ হয়েছে। মিলেছে মোবাইল। বিধায়ককেও গ্রেফতার করে নিয়ে চলে গিয়েছে সিবিআই। এখন পুকুরের জল ছেঁচা এবং জলে নেমে মোবাইলের খোঁজ করা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক কে দেবে, তাই নিয়ে ধন্দ। আর তাতেই সিবিআইকে নিয়ে রুষ্ট তৃণমূল নেতা।

সাধন জানাচ্ছেন, খরচ হয়েছে বিস্তর। দু’ দিনে ২৮ জন শ্রমিকের খরচ পারিশ্রমিক হয়েছে ১৪,০০০ টাকা। তার পর জিসিবি এবং ট্র্যাক্টর আনতে হয়েছিল। সেগুলো ঘণ্টায় ২,০০০ টাকা করে নিয়েছে। প্রায় ১০ ঘণ্টা কাজ করেছে। সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে ৪৮,০০০ টাকা। কিন্তু সিবিআইয়ের তরফে তো কানাকড়িও মেলেনি। সাধন বলছেন, যে হেতু তাঁর কথাতেই কাজ করতে এসেছিলেন শ্রমিকেরা, এখন তাঁকেই হিসেব মেটাতে হচ্ছে।

Advertisement

বিধায়কের বাড়িতে প্রায় ৭২ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তার মধ্যে আড়াই দিন গিয়েছে শুধু পুকুর থেকে মোবাইল উদ্ধার করতে। সে কাজে সিবিআইকে ভরসা করতে হয়েছিল জীবনেরই দলীয় সহকর্মীর উপর। আধিকারিকরা ডেকে এনেছিলেন তৃণমূলের ব্লক সহ-সভাপতি দিলাওয়ার শেখ এবং অঞ্চল সভাপতি সাধনকে। তাঁরাই দিয়েছিলেন লোকবল। কিন্তু পারিশ্রমিক নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি আধিকারিকরা। তাঁরাও সে সময়ে ভয়ে-উদ্বেগে কিছু বলেননি। এমনটাই জানাচ্ছেন সাধন।

দুই তৃণমূল নেতার দাবি, টাকা দেওয়া তো দূরের কথা। বিধায়কের দ্বিতীয় মোবাইল খুঁজে পাওয়ার পর থেকেই আর তাঁদের দিকে ফিরেই তাকাননি সিবিআই আধিকারিকেরা। দিলওয়ারের কথায়, “আমি নিজের পকেট থেকে কিছু টাকা দিয়ে জেসিবি, ট্র্যাক্টর ভাড়া করেছিলাম।” সাধন বলেন, ‘‘শ্রমিকদের সব টাকা এখনও মেটানো হয়নি। তাঁরা এখন ভিড় করেছেন আমার বাড়িতে।’’ রাগে-ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে সাধন বলছেন, ‘‘এ তো কাজের বেলা কাজি, কাজ ফুরোলে পাজি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন