Indian railways

ছোট স্টেশনে সুরক্ষা বিধি সেই শিকেয়

স্টেশনগুলিতে মুখ রক্ষার দুই থেকে তিন জন রেল পুলিশ ছাড়া ছিলেন না কেউ। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০২:২২
Share:

ফাইল চিত্র।

লকডাউন উত্তর রেলযাত্রার দ্বিতীয় দিনে অফিস টাইমে অব্যহত থাকল যাত্রীদের ভিড়। লালগোলা থেকে রেজিনগর পর্যন্ত পূর্ব রেলের লালগোলা-শিয়ালদহ শাখার ১৩টি স্টেশনের কোথাও দেখা মিলল, পুলিশের কোথাও মিলল না। তুলনামুলক ছোট স্টেশনগুলিতে সুরক্ষা বিধির বালাই ছিল না করোনাকালের রেল সফরে। কামরায় গাদাগাদি ঠেসাঠেসির ভিড় না থাকলেও প্রতিটি ট্রেনের আসা যাওয়ার সময় যাত্রী দৌরাত্ম্যে স্টেশনে স্টেশনে শিকেয় উঠল স্বাস্থ্যবিধি। পীরতলা স্টেশন থেকে উঠেছিলেন শিক্ষক আবদুল আরাফত। তিনি বলেন, “ভিড়ে ঠাসা ওই স্টেশনে কোনও পুলিশ ছিল না। প্লাটফর্মে ছিল না যাত্রীদের মধ্যে দূরত্ববিধিও। মুখঢাকাও ছিল না বহু মানুষের।”

Advertisement

টানা সাড়ে সাত মাস পর বুধবার থেকে শুরু হয়েছে লালগোলা শিয়ালদহের রেল যোগাযোগ। হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র লোকাল ট্রেনের মধ্যে শিয়ালদহ যাওয়ার ট্রেনের সংখ্যা সাকুল্যে একটি। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ট্রেন ধরার তাগিদ মানুষের বেশি। কাকডাকা ভোরের একটি মাত্র ট্রেন সহ পরের বাকি দুটি ট্রেনের শেষ ঠিকানা রানাঘাট। সেই ট্রেনগুলিতে অফিস যাত্রীদের ভিড় হল বেশি। আর সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কামরার ভিতর কোনও নজরদারিও ছিল না।

প্রথমদিন ট্রেনের প্রত্যেক বগির দুটি ও তিনটি আসনের সিটের মাঝখানে একটি করে সাদা কাগজ লাগিয়ে দূরত্ব বিধি মানার কথা স্মরণ করিয়েছিল রেল। সেই নিয়ম ভোরের ট্রেনের কোনও কোনও কামরায় মানা হলেও বেলার দিকে ট্রেনে সে নিয়মের কথা ঘুরেছে শুধু লোকমুখে। স্টেশনগুলিতে মুখ রক্ষার দুই থেকে তিন জন রেল পুলিশ ছাড়া ছিলেন না কেউ।

Advertisement

যদিও বহরমপুর স্টেশনের এক রেল আধিকারিকের দাবি “বারো কামরার এক একটি ট্রেনে যা যাত্রী বসার ব্যবস্থা আছে তার তুলনায় এই শাখায় যাত্রী সংখ্যা দ্বিতীয় দিনেও অনেক কম।”

জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের জন্য উর্দিধারী দুজন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ছিলেন নামেই। রেলযাত্রী সমীর ঘোষ বলেন, “ভিড়ের চাপে শারীরিক তাপমাত্রা মনে রাখা কষ্টকর। ফলে কারও করোনা হলেও তাঁর সঙ্গেই যেতে হচ্ছে একই ট্রেনে।” প্রথমদিন ট্রেন আসা যাওয়ার মাঝখানে প্লাটফর্ম স্যানিটাইজ় করা হলেও বহরমপুর স্টেশন সূত্রে জানা যায় দ্বিতীয় দিন ভোরের ট্রেন যাওয়ার পর রাতের শেষ ট্রেন যাওয়ার পর প্লাটফর্ম জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। রেলযাত্রী তারকনাথ হালদার বলেন, “ট্রেনে ওঠার সময় হুড়োহুড়ি বেশি তা দেখার কেউ নেই। যাত্রীদের মুখে মাস্ক থাকলেও স্টেশনে ঘোষণা মত স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা নেই।” পাশাপাশি বৃহস্পতিবার বহরমপুর স্টেশনের মূল প্রবেশপথে নামেই থাকল বিধির ব্যরিকেড। স্বচ্ছন্দে প্লাটফর্মে ঢোকা বেরোনো সবই করলেন যাত্রীরা। একই সঙ্গে পাশের ফুট ওভারব্রিজ দিয়েও যাত্রীরা স্বচ্ছন্দে স্টেশনে প্রবেশ ও প্রস্থান করেছেন। অলিখিত প্রবেশদ্বার বন্ধে কোনও নজরদারি চোখে পড়েনি স্টেশনে স্টেশনে। ধুলোভর্তি টিকিট কাউন্টারে গায়ে গা লাগিয়ে টিকিট কিনেছেন যাত্রীরা। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনের রেল সফরে খাতায় কলমেই আটকে থাকল রেলের আদর্শবিধি নিউ নর্মালের রেলযাত্রা ফিরল পুরোনো দিনেই।

একই সঙ্গে কম সংখ্যক ট্রেন চলাচল করায় দাবি উঠল ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর। দাবি উঠল এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোরও।

ভগবানগোলা ২এর এক সরকারি আধিকারিক রঘুনাথ ঘোষ বলেন, “সকালে মুরাগাছা থেকে অফিস আসতে সমস্যা নেই। কিন্তু অফিস ছুটির পর বাড়ি ফেরার ট্রেন না থাকায় সড়কপথে ফিরতে হচ্ছে। বেশি ট্রেন চললে এই অসুবিধা হত না।”

শিয়ালদহ শাখার জনসংযোগ আধিকারিক হ‍রিনারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভিড় ঠেকানোর জন্য রেল পুলিশ ও রাজ্য পুলিশ একযোগে কাজ করছে। তবু কোথাও কোথাও ভিড় হচ্ছে। সেসব কিছু খোঁজ নিয়ে পরবর্তী সময়ে ত্রুটি শুধরে নেওয়া হবে। টিকিট কাউন্টার, প্লাটফর্ম অপরিস্কার থাকার কথা নয়। যদি হয়ে থাকে তার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’’ রেল কর্তৃপক্ষ জানান, লিকুইড শোপ স্টেশন শৌচাগারে রাখা আছে। স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি স্টেশনে যাত্রীদের সুবিধার জন্য স্বয়ংক্রিয় স্যানিইজ়েশন মেশিন বসানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন