পুরসভা নয়, লালপুর থাকতে চায় পঞ্চায়েতেই

এ যেন হাতের পুরসভা পায়ে ঠেলা! অনেকেই চান তাঁদের এলাকা পুরসভা হোক! কিন্তু চাকদহের লালপুরের লোকজন রীতিমতো বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা পুরসভা নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতেই থাকতে চান।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৬
Share:

এ যেন হাতের পুরসভা পায়ে ঠেলা!

Advertisement

অনেকেই চান তাঁদের এলাকা পুরসভা হোক! কিন্তু চাকদহের লালপুরের লোকজন রীতিমতো বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা পুরসভা নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতেই থাকতে চান। যেমন ছিলেন এতদিন। তরুণ প্রজন্ম অবশ্য উল্টোটা চেয়েছিল। কিন্তু তাঁদের যুক্তি ধোপে টেকেনি। ফলে তাঁদের মনের ভিতরে খচখচে ভাবটা থেকেই গেল।

কারণ, স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাঁদের শহুরে বন্ধুরা তো মাঝেমধ্যেই টিপ্পনি কাটে, ‘‘ও, তোরা তো আবার পঞ্চায়েত এলাকার!’’ এ দিকে, না চাইতেই পুরসভায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগটা এসেছিল। চাকদহ পুরসভা যেচে প্রথমে জেলা প্রশাসননের কাছে, পরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছিল, তারা লালপুর এলাকাকে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।

Advertisement

পুর দফতর সেই চিঠি জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠায়। তারা বলে পুরসভা এবং তাতলা-২ পঞ্চায়েত, দু’ পক্ষেরই মতামত নিয়ে বিষয়টি যেন তাঁদের জানানো হয়। দু'’টিই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। পুরসভা যথারীতি জানায়, তারা তো এমনটাই চায়। পুরসভার যুক্তি ছিল, এতে পুর এলাকা যেমন বাড়বে, সেই অনুযায়ী জনসংখ্যা বাড়লে অনেক ক্ষেত্রে অনুদানের অঙ্কও বেশি মিলবে। পাওয়া যাবে নতুন প্রকল্পও। কাছাকাছি এলাকাগুলি পুরসভার মধ্যে রয়েছে, ফলে একই পরিষেবা কম খরচে পড়শি পাড়ায় পাঠানো যাবে।

এই প্রস্তাবে বেঁকে বসে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষা তাতলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের সমস্ত সদস্য বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরা লালপুরকে ছেড়ে দেবে না। পঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, ‘‘লালপুর আমরা ছাড়ব কী করে? সাজানো গোছানো ওই এলাকা আমাদের পঞ্চায়েতের মুখ। বলা যেতে পারে ওই এলাকাকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে করে গড়ে তুলছি।’’ পঞ্চায়েতের মূল্যায়ণে এলাকার উন্নয়ন বড় বিষয়। লালপুরের উন্নয়ন তাদেরকে তালিকায় ভাল জায়গা পেতে সাহায্য করবে বলেই মনে করছে পঞ্চায়েত। কয়েক হাজার মানুষের বাস লালপুরে। ভোটে বুথের সংখ্যা আটটি, গ্রাম সংসদ সাতটি।

এর পরে বাকি ছিল এলাকার বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া। লালপুরের বাসিন্দা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই শিক্ষক নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, মনতোষ সরকার, তাঁদের সঙ্গে অশোক মণ্ডল, শ্যামল সিংহ, রুদ্রপ্রসাদ উকিলরা এলাকার বাসিন্দাদের মতামত নেওয়ার জন্য সভা ডাকেন।

দিন কয়েক আগে সেই আলোচনা সভায় কম বয়সিরা জানান, তাঁরা পুরসভার মধ্যেই যেতে চান। কিন্তু, রাজি হননি প্রবীণরা। নির্মলেন্দুবাবু বলছেন, ‘‘পুরসভা যে পরিষেবা দেয়, সেই পথবাতি, বাড়ি থেকে ময়লা নেওয়া, পানীয় জল— সবই পঞ্চায়েত দেয়। এখন আবার বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হবে। তা হলে আর কী চায়?’’

প্রবীণদের যুক্তি, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় গেলে এক ধাক্কায় সম্পত্তি কর বেড়ে যাবে। নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে তৈরি হওয়ার পরে সার্টিফিকেট নেওয়ার হাজারও হ্যাপা। কেন সে সব আবার ঘাড়ে নেওয়া! বড় শহরের সব সুবিধা নিয়ে এলাকা যেমন আছে, তেমন থাকাই ভাল। বলা বাহুল্য, এমন যুক্তির পরে তরুণরা আর কোনও পাল্টা যুক্তি দেননি।

তবে বছর তিরিশেক আগে বর্ধিষ্ণু জনপদ লালপুর কিন্তু ছিল চাকদহ পুরসভার মধ্যেই। চাকদহের পুরপ্রধান দীপক চক্রবর্তী জানান, কোনও একটা মামলায় পুর কর্তৃপক্ষ হাজিরা না দেওয়ায় আদালতের রায়ে লালপুর চলে যায় চাঁদুড়িয়া-২ পঞ্চায়েতে। দীপকবাবু বলছেন, ‘‘বর্তমানে পুরসভার বাসিন্দা ৯৫ হাজারের মতো। লালপুর এলে তা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যেত। এই
এলাকা পুরসভায় না আসায় কেন্দ্রের অম্রুত প্রকল্প আমাদের হাতছাড়া হল। কেন্দ্রের আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সুযোগ আমরা পাব না।’’ দীপকবাবু জানান, সব রকম ভাবে চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু, লাভ কিছু হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন