রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ জঙ্গিপুর সফর

ধবল আকাশে বিদায়ী মেঘ

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। সেই সময়ে আট বছরে, জঙ্গিপুরের প্রায় সব গ্রামেই ঘুরেছেন তিনি— ঝাড়খন্ড লাগোয়া উমরাপুরের গন্ডগ্রাম থেকে বাংলা দেশ সীমান্ত লাগোয়া চর পিরোজপুর।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ১২:৫০
Share:

সেই-সময়: আট বছর আগে ভোটের প্রচারে নবগ্রামে প্রণব মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

দিন দুয়েক টানা বৃষ্টির পরে, শুক্রবার, বেশ ধবল আকাশ। তবু, কোথায় যেন মেঘ জমে আছে।

Advertisement

মঞ্চ জুড়ে পরিপাট্যের খামতি নেই— সেনার টহলদারি, রাষ্ট্রপতির অনুষঙ্গে যতটা গাম্ভীর্য থাকতে পারে, অনুষ্ঠানে সবই মজুত ছিল। তবু তাঁর কথায় কোথায় যেন বিদায়ী সুর— ‘‘এর পর যখন জঙ্গিপুরে আসব, তখন সাধারণ নাগরিকের মত।”

রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর শেষ জঙ্গিপুর সফরে সেই মেঘটা কাটল না যেন এ দিন।

Advertisement

রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি সারা দেশের। কিন্তু জঙ্গিপুরে তিনি কারও প্রণবদা, কারও বা সাবেক প্রণববাবু।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। সেই সময়ে আট বছরে, জঙ্গিপুরের প্রায় সব গ্রামেই ঘুরেছেন তিনি— ঝাড়খন্ড লাগোয়া উমরাপুরের গন্ডগ্রাম থেকে বাংলা দেশ সীমান্ত লাগোয়া চর পিরোজপুর। কখনও ভোট চাইতে, কখনও কোনও প্রকল্পের উদ্বোধনে। ফেলে আসা সেই সব দিনে, নামে চেনা পুরনো কংগ্রেস কর্মীদের ভিড়ও বুঝি এ দিন কিঞ্চিৎ ভারী করল তাঁকে। জেনে নিলেন, ‘‘কেমন আছ তোমরা?’’

দলের সেই সূ পুরনো কর্মীদের অনেকেই এখন তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। হোক না। এ দিন তাঁদের অনেককেও দেখা গেল প্রণববাবুর কাছে এসে জেনে গেলেন, ‘‘শরীর ভাল তো?’’

২০০৪ সালে জীবনের প্রথম জঙ্গিপুর লড়তে এসে যাঁর বাড়িতে ডেরা বেঁধেছিলেন, সেই ‘ধর বাড়ি’ এখন তৃণমূলের ঘাঁটি। পরে সে বাড়ি ছেড়ে শহরের ভাড়া বাড়িতে উঠে গেলেও যখনই এসেছেন সেখানে তার জন্য বিশেষ খাবার গিয়েছে সেই ধর বাড়ি থেকেই। দিল্লিতে জঙ্গিপুরের পরিচয় নিয়ে কেউ গেলেও সময় দিয়েছেন তিনি। অকাতরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়ে দিয়েছেন অনেকের। মনে আছে, ধর বাড়ির এক ছেলের ক্যানসারে মৃত্যুর খবরে, সফরসূচী ভেঙে ছুটে গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়িতে।

শুধু তার বাড়িতেইওবা কেন, ঝাড়খন্ড লাগোয়া সুতির বহুতালির দলের প্রবীণ কর্মী সওকত আলির অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে গেছেন তার বস্তি বাড়িতেও। কৃষ্ণশাল গ্রামে দলের কর্মী পঞ্চায়েত প্রধানের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে আর্শীবাদ করে এসেছেন। এ দিন সেই সব পুরনো স্মৃতিতেই ঘুরলেন বুঝি তিনি, নিঃশব্দে। গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রপ্রধান প্রণববাবুর সঙ্গে জঙ্গিপুরের সেই সম্পর্ক অনেকটাই ছিন্ন হয়েছে হয়ত, তবু।

এ দিন, সাগরদিঘিতে একটি বেসরকারী স্কুলের উদ্বোধন করেন তিনি। রঘুনাথগঞ্জ ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়ামে নিজের প্রতিষ্ঠিত গ্রাম ফুটবলের সূচনাও করেন। দুটি অনুষ্ঠানেই তাঁকে বলতে শোনা হৃগেল, “আর মাত্র দশটা দিন আমি দেশের রাষ্ট্রপতি পদে থাকব। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দিল্লির বাইরে এটাই আমার শেষ সফর। তবে এবার জঙ্গিপুরে আসব একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন