মুড়াগাছা পঞ্চায়েত

একশো দিনের কাজে দুর্নীতি, অভিযুক্ত নেতা

একশো দিনের কাজে ভুরি ভুরি অনিয়মের অভিযোগ উঠল নাকাশিপাড়ার মুড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কখনও নাবলাকদের প্রকল্পের মজুর হিসেবে দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কখনও সুপারভাইজার হিসেবে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও তার পরিবারের সদস্যেরা টাকা তুলে নিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫০
Share:

একশো দিনের কাজে ভুরি ভুরি অনিয়মের অভিযোগ উঠল নাকাশিপাড়ার মুড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কখনও নাবলাকদের প্রকল্পের মজুর হিসেবে দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কখনও সুপারভাইজার হিসেবে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও তার পরিবারের সদস্যেরা টাকা তুলে নিয়েছেন। কখনও যিনি ডেটা এন্ট্রি করেছেন নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তাঁকে সুপারভাইজারের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ঘটনার কথা জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল থেকে শুরু করে, জেলাশাসক, নাকাশিপাড়ার বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিডিও দিব্যেন্দু মজুমদার জানান, অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। বিডিও বলেন, “নাবালকদের কখনই এই প্রকল্পের কাজ দেওয়া যায় না। পঞ্চায়েত সদস্য সুপারভাইজার হতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা না থাকলেও পঞ্চায়েত আইনে পঞ্চায়েত সদস্য পঞ্চায়েত থেকে এ ভাবে আর্থিক ভাবে সুবিধা নিতে পারেন না।’’

ঘটনার সূত্রপাত, নাকাশিপাড়ার শালিগ্রাম ঘোষপাড়ায় গত বছর অক্টোবর মাসে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাস্তায় মাটি তোলাকে ঘিরে। পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের উত্তরা ঘোষের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু হয়। অভিযোগ, সেই কাজে সুপারভাইজার হিসেবে পঞ্চায়েত সদস্য উত্তরা ঘোষ, তাঁর স্বামী নাড়ু ঘোষ, তাঁর মেয়ে সোনামণি ঘোষ প্রাপ্য মজুরি তুলে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, উত্তরাদেবীর ছেলে একাদশ শ্রেণি পড়ুয়া এবং মাধ্যমিক পড়ুয়া মেয়ের নামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের শ্রমিক হিসাবে কাজের মজুরি দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়াও ওই গ্রামেরই নেপাল ঘোষ নামে এক ব্যাক্তির পরিবারের চার সদস্য ওই প্রকল্পে সুপারভাইজার হিসাবে কাজ টাকা তুলেছেন। নেপালের মেয়ে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়ার নামে এই প্রকল্পের শ্রমিক হিসাবে মজুরি মেটানো হয়েছে। নেপালের সাফাই, ‘‘কম বয়সিরা যে কাজ করতে পারে না এটা জানা ছিল না।’’

Advertisement

অভিযোগকারীদের মধ্যে সম্রাট ঘোষ, সাক্ষীগোপাল ঘোষ জানান, শুধু নাবালকদের এই প্রকল্পে মজুরি দিয়েছে তাই নয় গ্রামের কয়েক জন ভিন্‌রাজ্যে কাজে গেলেও তাঁদের নাম করেও মজুরির টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ধুবুলিয়া ব্লকের বাসিন্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজের প্রকল্পের ডেটা ইন্ট্রি অপারেটর। তিনি আবার কাজের সুপারভাইজারও। তাঁদের দাবি, গ্রামের বাসিন্দা রাখালচন্দ্র ঘোষের মেয়ে স্বপ্না ঘোষের ধুবুলিয়া থানা এলাকায় ৬-৭ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। তাঁর নামেও এই প্রকল্পের শ্রমিক হিসাবে মজুরি দেওয়া হয়েছে। যদিও স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘শালিগ্রামে বাবা মায়ের কাছে থাকি। তাই এখানেই একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেছি। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’’

অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের উত্তরা ঘোষের সাফাই, “নাবালকদের কাজ দেওয়া বা গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুপারভাইজার হতে পারে না এটা আমার জানা ছিল না। আমার অজান্তে এই ভুল হয়েছে।” ভিন্‌রাজ্যে যে কয়েকজন আছে তাঁরা এই প্রকল্পের কাজের সময় গ্রামেই ছিলেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের ডেটা ইন্ট্রি অপারেটর (ভিএলই) সামান্য টাকায় কাজ করেন। তাই তাঁকেও একশো দিনের কাজের প্রকল্পের একটি কাজে সুপারভাইজার করা হয়েছিল।

পঞ্চায়েতের প্রধান বিজেপির রামচন্দ্র সরকার বলেন, “নাবালককে কাজ দেওয়া থেকে শুরু করে ডেটা ইন্ট্রি অপারেটরকে সুপারভাইজারে হিসাবে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মজুরি দেওয়া ঠিক হয়নি। পঞ্চায়েত থেকে ডেটা ইন্ট্রি অপারেটরকে শোকজ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন