তিনি চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। পেশায় অঙ্গনওয়ারি কর্মী। স্বামী বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার। খাওয়া-পরার চিন্তা নেই। মাথার উপর পাকা ছাদ না থাকুক, তাতলা-২ পঞ্চায়েতের পুমলিয়ায় পাকা বাড়ি আছে রাধা দে ও তাঁর স্বামী সুভাষ দে-র।
যদিও সম্প্রতি রাজ্য সরকারের গৃহহীনদের জন্য আবাসন প্রকল্প গীতাঞ্জলীর ঘর পেয়েছেন তিনি। ওই বাড়ির অনুমোদনের জন্য সাক্ষর করেছেন রাধা নিজে।
বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। অভিযোগ পৌঁছেছে প্রশাসনের কাছেও। রাধা নিজে অবশ্য জানাচ্ছেন, কোনও নিয়ম তিনি ভাঙেননি। পঞ্চায়েত সমিতি তাঁর মতো অন্যান্য সদস্যদেরও ওই প্রকল্পের ঘর দিয়েছে। যদিও পঞ্চায়েত সমিতি তড়িঘড়ি জানিয়েছে, তেমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কেন্দ্র সরকারের প্রকল্প রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। আগে এই প্রকল্পের নাম ছিল ইন্দিরা আবাস যোজনা। বিপিএল তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরাই এই প্রকল্পের সুবিধা পান। বিপিএল তালিকা নিয়ে বাম আমল থেকেই অভিযোগ ছিল তৃণমূলের। তাই বিপিএল নন এমন দরিদ্র গৃহহীন মানুষ রাজ্য সরকারের গীতাঞ্জলী প্রকল্পে বাড়ি পেতে পারেন।
আগে জনপ্রতিনিধিরা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতেন না। এ বছর থেকে নিয়ম করা হয়েছে প্রকৃত দরিদ্র জনপ্রতিনিধিরাও এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। তার জন্য আবেদনের ফর্মও পৃথক।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাধারণ আবেদনকারী হিসেবে গীতাঞ্জলী প্রকল্পের বাড়ির জন্য আবেদন করেন। তা যাতে মঞ্জুর হয়, তার জন্য তাতে আবেদনপত্রে সাক্ষর করেন রাধা নিজে। সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়ে যায়। প্রথম দফার টাকায় নিজের পুরনো বাড়ির টালির চাল খুলে ফেলে তাতে নতুন ছাদ দিয়ে দেন সুভাষরা। পুরনো বাড়ি কিছুটা বাড়িয়েও নেওয়া হয় এর পর।
প্রথম দফায় ৪৯ হাজার টাকার কাজ হওয়ার পরে দ্বিতীয় দফার ২১ হাজার টাকার জন্য ফের আবেদন করেন সুভাষ। নিয়ম অনুযায়ী তার জন্য অসমাপ্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলেন তিনি। সেই ছবি-সহ ফের আবেদন করেন তিনি। সেখানেও সই করেন রাধা নিজে। সেই
টাকাও তিনি ইতিমধ্যে পেয়ে গিয়েছেন বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে শুরু হয় বিতর্ক। পঞ্চায়েত সমিতিতে অভিযোগ করেন। মৌখিক অভিযোগ হয়েছে চাকদহের বিডিও-র কাছেও।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাধা বলেন, ‘‘চাকদহ ব্লকে কারা কারা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও গীতাঞ্জলী প্রকল্পের বাড়ি পেয়েছে? বলুন। তার পরে আমি যা বলার বলব।’’ রাধার আরও বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ঠিক হয়েছে সব সদস্যই বাড়ি পাবেন। সবাই পেয়েছে। এ বার যা জিজ্ঞাসা বলার সভাপতিকে বলুন।’’
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হরপ্রসাদ হালদার বলেন, ‘‘কখনও হয় নাকি যে সব সদস্য এই প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছে! এটা ঠিক নয়। বুঝতেই তো পারছেন, বিষয়টি বিতর্কিত। ফলে এর বেশি আমি আর কিছু বলব না।’’
চাকদহের বিডিও নিশিথভাস্কর পাল বলেন, ‘‘লিখিত অভিয়োগ পেলে আমরা তদন্ত করে দেখব। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমরা দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আটকে দেব।’’