ঠেলার নাম ভোট, দিনভর শিলান্যাস

রবিবাসরীয় বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করে দেওয়ায় সে সুযোগটুকুও এখন উধাও। আক্ষেপে তাই কেউ বলে ফেলছেন, ‘‘আর একটা দিন সময় পেলে না...!’ কেউ বা কপালে ভাঁজ ফেলে হাত কামড়াচ্ছেন। সময় শেষ।

Advertisement

কৌশিক সাহা ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস 

কান্দি ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০০:০৪
Share:

শিলান্যাস: কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র

সময় ফুরিয়ে এসেছিল। যিনি দিল্লিতে থাকেন তিনি ছুটছেন পাঁচথুপির গ্রামে, যিনি সময়টা বেশিই কাটান কলকাতায় তিনি পড়ি কি মরি করে আসছেন ডোমকলের গ্রামে।লক্ষ্য— শিলান্যাস।

Advertisement

রবিবাসরীয় বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করে দেওয়ায় সে সুযোগটুকুও এখন উধাও। আক্ষেপে তাই কেউ বলে ফেলছেন, ‘‘আর একটা দিন সময় পেলে না...!’ কেউ বা কপালে ভাঁজ ফেলে হাত কামড়াচ্ছেন। সময় শেষ।

উদ্বোধন আর শিলান্যাসের হিড়িকে সালার থেকে খড়গ্রাম, কান্দি থেকে বড়ঞা বাতাসে কান পাতলেই সেই আক্ষেপের সুর। রাস্তাঘাট থেকে খাল সংস্কার, নতুন মাতৃসদন থেকে খেলার মাঠ— সবই এখন হাঁ মুখ অপেক্ষায়, তা হলে!

Advertisement

রবিবার ভোট ঘোষমা হতে পারে শুনে সকাল থেকে কান্দি ব্লকের দশটি অঞ্চলে এগারোটি হাইমাস্ট বাতি স্তম্ভের শিলান্যাস করেছেন অপূর্ব সরকার।

সেই তালিকায় ছিল— পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ঢালাই রাস্তা, খালা সংস্কার, বস্ত্র বিতরণ। অপূর্ব বলছেন, “দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামের রাস্তা ঘাটে অন্ধকার ঘোচানোর চেষ্টা করছিলাম। এবার সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।” কিন্তু এক দিনে এত গুলো, তাড়া ছিল বুঝি? রাখঢাক না রেখেই জানাচ্ছেন কি করব নির্বাচন এসে পড়েছে না!’’

বড়ঞা ব্লকে দু’টি ঢালাই রাস্তার উদ্বোধন করতে ওই দিনই এসেছিলেন সাংসদ অধীর চৌধুরী। ভোটের কথা মুখে না আনলেও ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনিও কবুল করেছেন, আর একটু সময় পেলে ভাল হত! সেই তালিকায় বামেদের উদ্যোগ খানিক কম। এক বাম নেতা চেনা স্বরে বলছেন, ‘‘আমরা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করিনা।

তৃণমূলের অপূর্ব সরকার।

তবে, মনে যাই বলুন না কেন, মুখে সকলেই বামেদের মতোই বুক ঠুকে জানিয়ে রাখছেন, তাঁরা কেউই পাইয়ে দেওয়ার তালিকায় নেই। জনতার পাশে আছে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, “অধীরদা সারা বছর মানুষের পাশে থাকেন, ভোটের আগে তাই আমাদের আলাদা মনে করানোর প্রয়োজন নেই। ভোট বলে আমরা আলাদা করে কোনও কিছু করছি না।’’ কান্দি বিধায়ক সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া অপূর্ব বলেন, “আমরা বছরভর এমন শিলান্যাস ও উদ্বোধন করে থাকি। মুখ্যমন্ত্রী চান মানুষ উন্নয়নে সমর্থন করুন, তাই আমাদের প্রধান লক্ষই হচ্ছে উন্নয়ন করা।”

কংগ্রেসের দাবি, নির্বাচন ঘোষণার আগে রাজ্যের একাধিক জেলায় প্রশাসনিক সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে তালিকায় মুর্শিদাবাদ ছিল না। তবে উদ্বোধন, শিলান্যাস বা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বোতাম টিপে ‘পাইয়ে দেওয়ার’ রাজনীতি দিব্যি করে গিয়েছেন তিনি।

কৃষক বন্ধু প্রকল্পের চেক বিলি থেকে মৎস্যজীবীদের সাইকেল ও মাছ বিক্রির সরঞ্জাম বিলি থেকে জল প্রকল্প— বাদ পড়েনি কিছুই। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস আঙুল তুলছেন— ‘‘ভোটের দিকে তাকিয়ে শাসকদল সারা বছরের কাজ জমিয়ে রেখেছিল। আর ভোটের মুখে উন্নয়েনর কথা তুলে ধরতে ফেব্রুয়ারি-মার্চে শিলান্যাসের হিড়িক পড়েছিল।’’ তাঁর দাবি, তাতে চিঁড়ে ভিজবে না।

বিজেপির মুর্শিাদাবাদ দক্ষিণ জেলা সহ-সভাপতি শাখারভ সরকার কংগ্রেসের সঙ্গে একই সুরে বলছেন, ‘‘ভোটকে সামনে রেখে এই শিলান্যাস। কোনও দিনই ওই সব প্রকল্প সফল হবে না।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল, ‘‘আমাদের ভোট সামনে রেখে শিলান্যাসের রাজনীতি করতে হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন