প্রতীকী ছবি
কলকাতা বা পড়শি উত্তর ২৪ পরগনার হাসপাতালগুলিতে ‘ঠাঁই নাই’ অবস্থা হলেও নদিয়ার দুই কোভিড হাসপাতাল এবং তিনটি সেফ হোম মিলিয়ে এখনও ফাঁকা পড়ে আছে প্রায় তিন চতুর্থাংশ শয্যা। কিন্তু সে কি কম সংক্রমণের কারণে নাকি পরীক্ষা তথা শনাক্তকরণ কম হওয়ায় সেই প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না।
নদিয়ার দুই কোভিড হাসপাতাল, কল্যাণীর কার্নিভাল হাসপাতালে ১২০টি এবং কৃষ্ণনগরের গ্লোকাল হাসপাতালে ১৫০টি শয্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে করিমপুর, ধুবুলিয়া ও হরিণঘাটার তিনটি ‘নিরাপদ বাড়ি’তে (সেফ হোম) আছে ৬০টি শয্যা। রবিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত এই ৩৩০ টি শয্যার মধ্যে ৮৩টিতে রোগী ভর্তি ছিলেন। করোনা আক্রান্তদের রাখার জন্য আটটি নিরাপদ বাড়ি তৈরি করা হলেও চালু হয়েছে মাত্র তিনটি। তার মধ্যে হরিণঘাটাপ বাড়িতে আজ অবধি এক জনকেও রাখা হয়নি। ধুবুলিয়ার বাহাদুরপুর বা করিমপুরের নিরাপদ বাড়িতে প্রথম দিকে বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিককে রাখা হলেও বর্তমানে সেগুলিও খালি পড়ে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কেউ-কেউ অবশ্য মনে করছেন, প্রচুর শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকায় ছবিটা যতটা নিশ্চিন্তের বলে মনে হচ্ছে, বাস্তবে তা নয়। দেহে ভাইরাস নিয়ে উপসর্গহীন অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং রোগ ছড়াচ্ছেন, পরীক্ষা করতে না পারায় যাঁদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এঁরাই সবচেয়ে বিপজ্জনক। এঁদের শনাক্ত করার জন্য প্রতি দিন আরও বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু করোনা পরীক্ষার যে দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা আছে, তাতে কি পৌঁছনো যাচ্ছে? সুপরিকল্পিত ভাবে ব্লক ও পুরসভা স্তরে পরীক্ষা বাড়িয়ে কি বেশি-বেশি সংক্রমণ ধরা যাচ্ছে?
দু’টি প্রশ্নেরই উত্তর ‘না’। কেননা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জেলা লালারস পরীক্ষার দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা ৮০০। সেখানে শুধউ যে পৌঁছও যায়নি তা নয়, গত এক সপ্তাহে কোনও-কোনও দিন তার অর্ধেকও করা যায়নি (সঙ্গের বক্সে দেওয়া পরিসংখ্যান দ্রষ্টব্য)। এখন যে ভাবে কল্যাণী ও বহরমপুরে লালারসের নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাতে সাধারণত দু’দিনের মধ্যে রিপোর্ট চলে আসছে। ফলে দু’দিনের ব্যবধানে নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা ও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা খতিয়ে দেখলেও ছবিটা অনেকটা স্পষ্ট হওয়ার কথা। যদিও জেলা প্রশাসন তথা স্বাস্থ্যকর্তাদের অপর একটি অংশের মতে, বেশি পরীক্ষা করলেই যে বেশি আক্রান্তের সন্ধান মিলবে, তা সব সময়ে না-ও হতে পারে। রোজকার নমুনা পরীক্ষা ও তার দু’দিন পরে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা মিলিয়ে দেখলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করছেন, “পরীক্ষা বেশি করলেই যে আক্রান্তের সন্ধান বেশি পাওয়া যাবে তেমনটা ভাবার কারণ নেই। এর পিছয়ে একাধিক কারণ কাজ করে।”
নদিয়ার স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, যখন দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকেরা আসতে শুরু করেছিলেন তখন তাঁদের ‘স্ক্রিনিং’ করে নিভৃতবাসে রাখার পাশাপাশি পরীক্ষা করে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারায় জেলায় সংক্রমণ তত ছড়াতে পারে নি। সে কারণেই হাসপাতালে তত ভিড় নেই। কিন্তু যত সময় যাবে, গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কাও যে বাড়বে তা কেউই অস্বীকার করতে পারছেন না। এবং সকলেই মানছেন যে সেই কারণেই জেলায় ‘কমিউনিটি টেস্ট’ বা উপসর্গহীনদের মধ্যে পরীক্ষা নির্বিচারে বাড়ানো দরকার। যে সব এলাকায় এখনও করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি বা আক্রান্তের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশের কম, সেই সব এলাকাতেও নাগাড়ে পরীক্ষা করে যাওয়া দরকার। যত বেশি পরীক্ষা করে উপসর্গহীন ভাইরাস বাহকদের জনসমষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে, ততই ঝুঁকি কমবে।
কিন্তু এর পরেও রোজকার নমুনা পরীক্ষায় গতি আসছে না কেন?