লিঙ্ক নেই ব্যাঙ্কে, ঘুরে মরছে গ্রাহক

দিনের পর দিন এসে ঘুরে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা। ব্যাঙ্ক-মিত্রেরা প্রশ্নে-প্রশ্নে জেরবার। সদুত্তর দিতে না পেরে  প্রায় মার খাওয়ার মুখে। আপাতত এমনই অবস্থা বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের বহু গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের।

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

কৃষ্ণনগর ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

ব্যাঙ্ক আছে। ব্যাঙ্কে টাকা আছে। কিন্তু লিঙ্ক নেই। তাই টাকা তোলা যাচ্ছে না।

Advertisement

দিনের পর দিন এসে ঘুরে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা। ব্যাঙ্ক-মিত্রেরা প্রশ্নে-প্রশ্নে জেরবার। সদুত্তর দিতে না পেরে প্রায় মার খাওয়ার মুখে। আপাতত এমনই অবস্থা বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের বহু গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের।

দৃশ্য এক: থানারপাড়া এলাকার দোগাছি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উজিয়ে পিপুলখোলা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে এসে বসে রয়েছেন শুকতারা খাতুন। হাজার সাতেক টাকা খুবই প্রয়োজন। দু’সপ্তাহ ধরে তিনি ঘুরছেন। শুক্রবার ব্যাঙ্ক-মিত্র সাহিন মণ্ডল হাত জোড় করে বলেন, “আজও যে লিঙ্ক নেই দিদি!” শুনে প্রায় কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা শুকতারার।

Advertisement

দৃশ্য দুই: সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে ওই কেন্দ্রে এসেছেন সরলা বিবি। ব্যবসার জন্য তিনি এক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছেন। অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পড়ে গিয়েছে। অথচ পর পর পাঁচ দিন এসেও তুলতে পারেননি। সাহিনের হাতজোড় দেখে তিনি ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, “কিচ্ছু শুনতে চাই না। তোমার কাছে বই করেছি। টাকা তুলে দিতে হবে!” অসহায় সাহিন বলেন, “আশপাশের ৩টে গ্রামে ১৩ হাজার গ্রাহক আমার। এ বার সত্যিই মার খেতে হবে।”

দৃশ্য তিন: বেলডাঙার মির্জাপুর শাখায় ব্যাজার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য দুখু বিবি। তাঁর আক্ষেপ, “এখানেই আমাদের গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্ট। কিন্তু মাঝে-মধ্যেই লিঙ্ক থাকছে না। বই সমস্যায় পড়ছি।”

দৃশ্য চার: শান্তিপুরের মানিকনগর গ্রাহক কেন্দ্র থেকে খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছেন পঁচাত্তর বছরের শান্তিলতা বিশ্বাস। এ নিয়ে চতুর্থ দিন। অনেক বয়স্কেরই একই অবস্থা। ভাগীরথী পেরিয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে বাগআঁচড়ায় ব্যাঙ্কের শাখা থেকে টাকা তোলার ক্ষমতা তাঁদের নেই। ব্যাঙ্ক-মিত্র জয়ন্ত মাহাতো বলেন, “দেড় মাস এই অবস্থা চলছে। জানুয়ারিতে ৪ দিন কাজ করতে পেরেছি। প্রায় সময়েই লিঙ্ক থাকছে না। সকাল থেকে বসে থাকছি তীর্থের কাকের মতো।”

নদিয়ার ১৮১টি এবং মুর্শিদাবাদের প্রায় দেড়শো গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রেই কার্যত এই দশা। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রাধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা এসে পড়ে আছে। ২০১২-য় প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক এই কেন্দ্রগুলি খুলেছিল। সেগুলি পরিচালনার জন্য এক সংস্থার মাধ্যমে এলাকার তরুণ-তরুণীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন তাঁরাই পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক ব্যাঙ্ক কর্মচারী সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক তপন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “সব ব্যাঙ্কেই গত এক মাস ধরে লিঙ্কের সমস্যা হচ্ছে।” বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের রিজিওন্যাল ম্যানেজার সুব্রত পাল বলেন, “গত দু’সপ্তাহ থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় এই লিঙ্কের সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি কলকাতা থেকে দেখা হয়। আমরা সেখানে জানিয়েছি।’’

নদিয়ার রিজিওন্যাল ম্যানেজার অসিত পালের দাবি, “গ্রাহক সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলেই সিস্টেমে চাপ পড়ছে। তার ফলে কখনও-কখনও লিঙ্ক পেতে সমস্যা হচ্ছে। হেড অফিস থেকে তদারকি হচ্ছে। মিটে যাবে।”

নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “আমাকে এত দিন কেউ এই বিষয়টা জানাননি। ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলব, যাতে এই সমস্যার সমাধান হয়, গ্রাহকেরা ঠিকঠাক পরিষেবা পান।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন