শ্রীলঙ্কা যাওয়ার টাকা নেই, মঞ্চে অনিশ্চিত খুদে

মাঝে মাঝেই আনমনা হয়ে পড়ছে খুদে ছেলেটি। কারও সঙ্গে ভাল করে কথা বলছে না। আবার দিন এগিয়ে আসছে দেখে উসখুস করে। থেকে থেকে মায়ের কাছে গিয়ে শুধোয়, ‘‘মা আমি যেতে পারব তো?’’ বুক ঠেলে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মায়ের। আঁচল দিয়ে কপালটা ছেলের কপালটা মুছে দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

সাত্যকি নিয়োগী।

মাঝে মাঝেই আনমনা হয়ে পড়ছে খুদে ছেলেটি। কারও সঙ্গে ভাল করে কথা বলছে না। আবার দিন এগিয়ে আসছে দেখে উসখুস করে। থেকে থেকে মায়ের কাছে গিয়ে শুধোয়, ‘‘মা আমি যেতে পারব তো?’’

Advertisement

বুক ঠেলে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মায়ের। আঁচল দিয়ে কপালটা ছেলের কপালটা মুছে দেন। মুখে বলেন, ‘‘ঠিক পারবি।’’ কিন্তু নিজের কথায় নিজেই আস্থা রাখতে পারেন না। পারবেন কী করে? সে যে মেলা টাকার ধাক্কা। ছেলে শ্রীলংকায় বিশ্ব একক নাটক প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার ডাক পেয়েছে। কিন্তু ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরোনের দশা। ফলে ছেলে শ্রীলঙ্কা যেতে পারবে কিনা সেই চিন্তায় নিয়ে ঘুম উবে গিয়েছে মায়ের।

আগামী ২০-২৪ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে গ্লোবাল কাউন্সিল অফ আর্ট এন্ড কালচার আয়োজিত ষষ্ঠ ‘কালচার অলিম্পেড অফ পারফরমিং আর্টস’ প্রতিযোগিতা। সেখানে একক নাটক অনূর্ধ্ব ১২ বছর বিভাগে যোগ দিতে যাওয়ার কথা রানাঘাটের সাত্যকী নিয়োগীর। রানাঘাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বাজারে বাড়ি সাত্যকির। বাবা সুদীপ্ত একটি বেসরকারি সংস্থার কাজ করতেন। কিছুদিন হল সেটি বন্ধ। সুদীপ্ত বলেন,“ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে গেলে খরচ পড়বে কমবেশি এক লাখ টাকা। এখন আমার যে অবস্থা, তাতে তিনজনের সংসার চালাতে কালঘাম ছুটছে। তাই আমার পক্ষে ছেলেকে ওই প্রতিযোগিতায় পাঠানো অসম্ভব।” তিনি জানান, আগামী ৩১ অগস্টের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এ জন্য জন পিছু খরচ হবে সাড়ে ২৭ হাজার টাকা। সেই টাকাও আমার হাতে নেই। মা মিতাদেবী বলেন, “ছেলেটা মনমরা হয়ে রয়েছে। আমাদের যা অবস্থা তাতে ওকে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো সম্ভব নয়। কেউ যদি এগিয়ে আসেন তা হলে যেতে পারবে।’’

Advertisement

রানাঘাট পালচৌধুরী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাত্যকি লেখাপড়ার পাশাপাশি নাটকের সমান ঝোঁক। কলকাতার নেহেরু চিলড্রেন মিউজিয়ামে নাটক শিখছে। গত ২৯ মে মহারাষ্ট্রের পুনেতে অখিল ভারতীয় সংস্কৃতি পরিষদ আয়োজিত সারা ভারত জাতীয় ডান্স, ড্রামা ও মিউজিক প্রতিযোগিতায় একক নাটকে সে প্রথম হয়ে আন্তজাতিক ওই প্রতিযোগিতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়। আবৃত্তি, নাচেও সমান পারদর্শী সে। কিন্তু জীবনে প্রথমবার সুযোগ পেয়েও যেতে না পারার অনিশ্চয়তায় মুখ ভার তার। ধরা গলায় বলে, ‘‘জানো কাকু, ওখানে গেলে আমি নিশ্চয়ই কিছু একটা করতে পারতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন