বিপাকে পাত্রী পক্ষ, মুশকিল আসানে ক্লাব

নওদার আমতলা হাসপাতাল গেটের কাছে জুতো সেলাই করেন রতন দাস। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। ফলে নিয়মিত কাজে আসতে পারেন না। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। অর্থের অভাবে তাঁর আর লেখাপড়া এগোয়নি।

Advertisement

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

বিয়ের অনুষ্ঠান: নওদার আমতলায়। নিজস্ব চিত্র

পাত্র বিএ পাশ। গুজরাতে চাকরি করেন। হরিহরপাড়ার শ্রীপুরে নিজের বাড়ি। নওদার আমতলার বছর একুশের পাত্রীকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু পাত্রীপক্ষের আথির্ক সমস্যা থাকায় তারা কোনও অনুষ্ঠান করতে রাজি ছিলেন না। শুধু রেজিস্ট্রি করে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পাত্রপক্ষের তেমন দাবি না থাকলেও এমন প্রস্তাব শুনে পিছিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসে নওদার আমতলার একটা ক্লাব। ক্লাবের সদস্যেরা পাত্রীর বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, ‘‘অনুষ্ঠানের দায়িত্ব আমাদের।’’ সেই মতো রবিবার, বিয়ের দিন প্রায় ৩০০ অতিথিকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলেন তাঁরা। আয়োজনেরও ত্রুটি ছিল না। কফি, ফুচকার একটা স্টল ছিল।বিয়েবাড়ি সাজানো হয়েছিল রকমারি ফুল দিয়ে। ছিল আতসবাজিরও ব্যবস্থা।

Advertisement

নওদার আমতলা হাসপাতাল গেটের কাছে জুতো সেলাই করেন রতন দাস। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। ফলে নিয়মিত কাজে আসতে পারেন না। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। অর্থের অভাবে তাঁর আর লেখাপড়া এগোয়নি। অনেক চেষ্টা করে বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্র ও পাত্রী উভয়েরই মত নিয়ে বিয়ের কথা পাকা হয়। কিন্তু পাত্রীপক্ষ খরচ করতে পারবে না। ফলে কোন অনুষ্ঠান নয়। সাদামাটা রেজিষ্ট্রি করে নিয়মরক্ষার বিয়ে। এতে তীব্র আপত্তি জানায় পাত্রপক্ষ। তাঁরা জানিয়ে দেন, ‘‘অনুষ্ঠান করলে তবেই বিয়ে। নইলে নয়।’’ খবর পেয়ে শেষ পর্যন্ত পাত্রীপক্ষের কাছে ছুটে আসে নওদার আমতলার ওই ক্লাব। ক্লাবের সদস্যদের কথায়, ‘‘আমরা মেয়ে পক্ষের অনুমতি নিয়েছি। তারা বলেছে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। সেই কারণেই আমরা এগিয়ে এসেছি। আমরা নিজেরা চাঁদা তুলেছি। অনেকে আমাদের সাহায্যও করেছেন।’’

রবিবার সন্ধ্যায় ছিল অনুষ্ঠান। প্রায় তিনশো লোক নিমন্ত্রিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৬০ জন বরয়াত্রী। এ দিন মেনুতে ছিল—স্যালাড, চিপস, শাক, আলু ফুলকপির তরকারি, ডাল, মুরগির মাংস, মাছ, চাটনি, দই, মিষ্টি ও পানমশালা। পাত্রীর মা পূর্ণিমা দাস ও বাবা রতন দাস বলেন, ‘‘আমার মেয়ে পারমিতার বিয়ে। পাত্র হরিহরপাড়ার শ্রীপুরের অসীম দাস। আমরা অভাবের কারণে বলেছিলাম, অনুষ্ঠান করতে পারব না। তাতে পাত্রপক্ষ পিছিয়ে যাচ্ছিল। পরে ওই ক্লাব আমাদের সাহায্যের কথা বলে। আমরা ওই ক্লাবের সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’

Advertisement

ক্লাবের সম্পাদক রাজা মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমরা বিয়ের দিনের পুরো খাবার-সহ অনেক ব্যবস্থা করেছি। আমরা নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়েছি। বেলডাঙার একটি সংগঠনও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিয়েবাড়ি সাজানো ও পরিবেশনের দায়িত্ব সামলেছেন আমাদের ২৫ জন ক্লাব সদস্য।’’

মধুরেণ সমাপয়েৎ হওয়ায় খুশি সকলেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement