বিস্ময় কাটছে না।
দলের এক কর্মী কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘এত দিন সিপিএম করা একটা লোককে নিয়ে প্রচারে নেমে কি বলব বলুন তো!’’ পায়া ভাঙা চেয়ারটা গোড়ালি দিয়ে ঠেলে সরিয়ে পাশের জন বলছেন, ‘‘যাকে কোনও দিন চিনলামই না তার হয়ে বলবটা কী!’’
রাজ্যে বিজেপি-র একমাত্র সংখ্যালঘু মুখ মাফুজা খাতুনকে মনোনয়ন দেওয়ায় জঙ্গিপুরের দলীয় কর্মীরা এমনই হতবাক।
উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলার বিজেপি মুখপাত্র তন্ময় দাস বলছেন, “দলীয় হিসেবে আমাদের লক্ষ্য জঙ্গিপুরে অন্তত ৩ লক্ষের বেশি ভোট পাওয়া। সে ক্ষেত্রে অন্তত ৮০ হাজার সংখ্যালঘু ভোট পেতে হবে বিজেপিকে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের মধ্যে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল আমরা।” তা হলে?
আমতা আমতা করে তিনি জানাচ্ছেন, সংখ্য়ালঘু মাফুজা যদি সেই কামতি কিছুটা পুষিয়ে
দিতে পারেন।
দলে সুবক্তা এবং দীর্ঘ দিনের বাম বিধায়ক ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে মাফুজা খাতুন অসংগঠিত সংখ্যালঘু ভোট টেনে আনতে পারবেন— মুখে এ কথা নেতারা বলছেন বটে, কিন্তু সন্দেহটা জাপটে রয়েছে তাঁদেরও। তাঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘না পারছি গিলতে, না উগরোতে, কি যে করি!’’
সোমবার তাই দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বের। জোর দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘু মহল্লাগুলিতে বেশি করে সভা করার উপর। বিজেপি-র উত্তর মুর্শিদাবাদের সভাপতি সুজিত দাসও বলছেন, “জঙ্গিপুর লোকসভায় সংখ্যালঘু ভোট প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। সে কথা ভেবেই রাজ্যে জঙ্গিপুরে পাঠানো হয়েছে মাফুজা খাতুনকে। দলের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্নমত যে নেই তা নয়। প্রচার শুরু হোক, তার পর ভাবা যাবে।’’
দলের এক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘দলের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে চর্চা চলছিল ঠিকই। তা বলে দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে এ ভাবে জঙ্গিপুরে একজন বহিরাগতকে প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হবে তার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেন না দলের কর্মীরা। এতে বিজেপির নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কে চিড় ধরলেও আশ্চর্য হবার নয়।”
ওই নেতার ব্যাখ্যা, ৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জঙ্গিপুর লোকসভা এলাকায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে এখনও বিজেপির প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে। সংখ্যালঘু এলাকার বহু বুথে এখনও কমিটি পর্যন্ত গড়তে পারেনি দল। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ায় দল কতটা লাভবান হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বরং আশঙ্কা আছে এর ফলে বিজেপির দীর্ঘদিনের ভোট ব্যাঙ্ক বিরুপ হয়ে অন্য দিকে চলে যাবে না তো ?
জঙ্গিপুরে দলের কর্মীদের কাছে একেবারে অপরিচিত মুখ দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা অকৃতদার মাফুজা। বালুরঘাটেই তার বাবা, মা রয়েছেন। বছর দুয়েক আগে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। ভাল বক্তাও। এসএফআই দিয়ে তাঁর রাজনীতির শুরু। ১৯৯৩ সালে পঞ্চায়েত প্রধান, পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও হন সেখানে। ২০০১ সালে সভাপতি পদে ইস্তফা দিয়ে কুমারগঞ্জ বিধানসভায় দাঁড়ান সিপিএমের হয়ে এবং জয়ী হন। ২০০৬ সালেও জয়ী হন তিনি। ২০১১ ও ২০১৬ সালে সিপিএমের টিকিট পেলেও পরাজিত হয়েছিলেন। তারপরেই তিন তালাক ইস্যুতে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে।
২০১৪ সালের জঙ্গিপুর লোকসভায় মাত্র ৯৬ হাজার ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লোকসভা এলাকায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৪৫ লক্ষে। মুশকিল কি আসান হবে তাতে? মাফুজা বলছেন, ‘‘দেখুন না কী হয়!’’