আধা সেনার অচেনা দাপট

‘শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ’-এর নদিয়া জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ শাশ্বত বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, আধা সেনা ছাড়া ভোটের ডিউটি করব না। জীবনের দাম অনেক বেশি।”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৬
Share:

বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। বগুলায়। ছবি: প্রণব দেবনাথ

আগের দিনই দৈয়েরবাজারের একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ২০ জন ভোটকর্মী জানিয়েছিলেন, আধাসেনা ছাড়া ভোট পরিচালনা করবেন না। আবার প্রশাসনও জানিয়ে দিয়েছিল, ওই কেন্দ্রে আধাসেনা নয়, রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট হবে। শেষ পর্যন্ত বাকি ভোটকর্মীরা আধা সেনা ছাড়া ভোটগ্রহণে রাজি হলেও অনড় রইলেন ২৭৮ নম্বর বুথের সেকেন্ড পোলিং অফিসার শাশ্বত ঘোষ। সোমবার ভোট শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি বুথ ছেড়ে চলে যান।

Advertisement

‘শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ’-এর নদিয়া জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ শাশ্বত বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, আধা সেনা ছাড়া ভোটের ডিউটি করব না। জীবনের দাম অনেক বেশি।” পরে তাঁর জায়গায় বিকল্প ভোটকর্মী পাঠিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু করা হয়। এই নিয়ে সকালে খানিক হইচই হলেও তা নিতান্তই বিক্ষিপ্ত ঘটনা। কেননা জেলার দুই কেন্দ্রের অধিকাংশ বুথেই আধা সেনা মোতায়েন ছিল। এবং রাজ্যের অন্য জায়গায় তাদের যতটা নিষ্ক্রিয় দেখিয়েছে, নদিয়ায় ছবিটা ছিল উল্টো। চাপড়া থেকে চাকদহ, নাকাশিপাড়া থেকে হাঁসখালি, তেহট্ট থেকে শান্তিপুর সর্বত্রই ছিল প্রায় একই চিত্র। তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলেছেন। বিরোধী অবশ্য খুশি।

চাপড়ায় ঘিলু শুকিয়ে যাওয়া রোদের মধ্যে জলপাই পোশাকে কাঁধে রাইফেল নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এক জওয়ান। ভোটার কার্ড আর স্লিপ দেখে এক-এক করে ভোটারদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন বুথের ভিতরে। ভরদুপুরে যখন কোনও ভোটার নেই, খানিক দূরে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই ফাঁকে এক যুবক ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতেই রে-রে করে তেড়ে এসে কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেন তিনি।

Advertisement

সারা দিনই কোথাও বুথের সামনে রাস্তায় তৈরি হওয়া জটলার দিকে লাঠি হাতে তেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে আধা সেনাকে, কোথাও আবার নির্বাচন কমিশনের পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকদের পর্যন্ত বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের অভিযোগ, “যেখানে আমরা শক্তিশালী, সেখানেই আধা সেনা পরিকল্পিত ভাবে সমস্যা তৈরি করেছে। আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে, মহিলাদের মারধর করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছি।”

উল্টো ছবিও যে চোখে পড়েনি, তা অবশ্য নয়। যেমন চাপড়ার ডোমপুকুর গ্রামে বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের সামনে যখন তৃণমূল কর্মীরা হম্বিতম্বি করছে, কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে আধা সেনাকে। তবে নদিয়া জুড়ে তাদের ভূমিকায় খুশি তৃণমূল বিরোধীরা। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে বলেন, “কয়েকটা জায়গা ছাড়া আধা সেনার বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ নেই।” সিপিএম প্রার্থী শান্তনু ঝাও একই কথা বলেছেন।

তবে তার মানে এই নয় যে, ভোটে কারচুপি পুরোপুরি আটকানো গিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার কর্মীরাই বলছেন, আধা সেনা বড় জোর বুথ সামলাতে পারেন। কিন্তু বুথ থেকে একটু দূরে গ্রামের ভিতরে কয়েক দিন ধরে যে হুমকি আর আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তা তারা আটকাবে কী করে? ফলে, যা হওয়ার ছিল, তা-ই হয়েছে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন